গণতন্ত্র সুশাসনই শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি -প্রধানমন্ত্রী

52

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং প্রত্যাশা পূরণের জন্য কমনওয়েলথকে তার লক্ষ্য অর্জনে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘চারটি স্তম্ভের নিরিখে এই সিএইচওজিএম-এ চিহ্নিত লক্ষ্য অর্জন করতে চাইলেও সংস্কার অপরিহার্য।’
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনে ২৫তম কমনওয়েলথ হেডস অব গভর্নমেন্ট সভায় (সিএইচওজিএম) ল্যানকেস্টার হাউজে তার প্রদত্ত বক্তব্যে এই সংস্কার প্রস্তাব দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কমনওয়েলথের বিভিন্ন সংস্থার ভূমিকা ও কার্যক্রমের পুনর্গঠন প্রয়োজন, যাতে সদস্য দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং প্রত্যাশা পূরণ হয়। আমরা কমনওয়েলথের একটি ব্যাপক সংস্কারের জন্য একটি বিশিষ্ট ব্যক্তি গ্রুপ (ইপিজি) গঠনের সুপারিশ করছি।’
তিনি ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে কমনওয়েলথ সচিবালয় পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই সিএইচওজিএম সভায় নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনেই এর প্রয়োজন রয়েছে। তিনি চার্টার এবং ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে লক্ষ্যমাত্রার আলোকে মহাসচিবের কৌশলগত পরিকল্পনা-২০২০-২১-এর মূল্যায়ন করেন।
বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সচিবালয়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদক্ষেপটিকে কমনওয়েলথের বৃহত্তর ও ব্যাপক সংস্কারের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, যাতে এটি আরো মানুষ এবং উন্নয়ন কেন্দ্রিক হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে তিনি পরামর্শ দেন যে, সচিবালয় যেনো উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সহায়তায় তার লক্ষ্যকে আরও জোরদার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমনওয়েলথ ঘোষণার কানেকটিভিটি, সাইবার সিকিউরিটি, গভর্ননেন্স এবং ব্লু চার্টার সম্পর্কিত বিষয় বাস্তবায়নের জন্য কমনওয়েলথ সচিবালয়ের উচিত একটি অ্যাকশন প্লান তৈরি করা।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী দুই বছরের মধ্যে কমনওয়েলথ তাদের কাজের ফলশ্রুতিকেন্দ্রিক প্রয়াসগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করবে, যার মধ্যে থাকবে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও টেকসই উন্নয়ন এবং অধিকাংশ সদস্য দেশের বাস্তব চ্যালেঞ্জসমূহ।
নাজুক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন (সিএমএজি) গ্রুপের ভূমিকা স্পর্শকাতর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝে সে অনুযায়ী এবং কমনওয়েলথ ঐক্যের চেতনাকে সামনে রেখে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন, আইনের শাসনই লক্ষ্য থাকতে হবে। কেন না, এগুলো হলো টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর গণতন্ত্র রক্ষা, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গণতান্ত্রিক ও সুশাসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে সহায়তা ও সম্পৃক্ত হওয়াটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ২৫তম সিএইচওজিএম কমনওয়েলথকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দারিদ্র্যমুক্ত, প্রগতিশীল, সমৃদ্ধ, স্পন্দনশীল এবং স্বপ্নদর্শী কমনওয়েলথ হিসেবে অনুধাবনে এক ধাপ এগিয়ে নিতে পারে।
প্রযুক্তি ও গবেষণা বিনিময়ের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : এদিকে উদ্বোধনী দিনে ‘একটি অধিকতর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ (কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার)’ শীর্ষক এক অধিবেশনে অংশ নিয়ে বলেছেন, নীল অর্থনীতির সুফল পেতে হলে সামর্থ্য বিনির্মাণ এবং প্রযুক্তি, গবেষণা ও উত্তম উদ্যোগ বিনিময়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থাভুক্ত দেশগুলোর তাদের অঞ্চলের বাইরেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নীল অর্থনীতির ধারণা বেগবান হওয়ায় এই প্রয়োজনীয়তাটা আরো পরিষ্কার হয়েছে।’তিনি বলেন, বাংলাদেশ কমনওয়েলথ নীল সনদ গ্রহণকে পুরোপুরি সমর্থন করে। বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ এবং বিমসটেক, সার্ক ও আইওআরএ-এর সদস্য হিসেবে আমাদের মহাসাগর, সাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য নিরলসভাবে নীল অর্থনীতিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই সনদে ব্লু চার্টার অ্যাকশন ফান্ড ও ব্লু চ্যাম্পিয়ন্স গঠনসহ বেশকিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগের কথা বর্ণিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ সনদকে যথাশিগগির সম্ভব কার্যোপযোগী করে তুলবে।
‘একটি অধিকতর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ (কমনওয়েলথ সাইবার ডিক্লারেশন)’ বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটি খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশে একটি জাতীয় অগ্রাধিকার, যা ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ এবং এ সংক্রান্ত সামর্থ্য নির্মাণ ডিজিটাল বিভাজন হ্রাস, দারিদ্র্য প্রশমন, টেকসই উন্নয়ন ও সার্বিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের গোড়ার কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে বর্তমানে যেখানে আমাদের অর্থনীতিগুলো বর্ধমান হারে অবাধ ও তথ্য প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে সেখানে বিভিন্ন দেশ, সেক্টর ও সংস্থাগুলোতে একটি মুক্ত, গতিশীল ও নিরাপদ ইন্টারনেটের জন্য আমাদের বৈশ্বিক তথ্য ইকোসিস্টেমে ‘উন্মুক্ততা’র প্রসারে কাজ করা উচিত।
এ ক্ষেত্রে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, একই সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার হামলা ও সন্ত্রাসবাদের প্রচারের হুমকি মোকাবেলাও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কমনওয়েলথ সাইবার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘোষণার রূপরেখা অনুযায়ী সাইবার গভর্ননেন্সে সহযোগিতার জন্য মূলনীতি ও দিকনির্দেশনাসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি এ ঘোষণা আশু বাস্তবায়নে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কমনওয়েলথ সচিবালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘কারিগরি ও বিশেষায়িত দক্ষতা বিনিময় ও সামর্থ্য বিনির্মাণ আমাদের জনগণের জন্য অবশ্যই একটি অগ্রাধিকার হিসেবে চাই।’