পুলিশের দাবী পাইপগান ও ছুরি উদ্ধার ॥ কানাইঘাটের সেই ফয়জুর ৪ মাস পর গ্রেফতার

69

বিশ্বনাথ থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ১টি এসল্ট মামলার আসামীকে অপহরণ করে গুমের ঘটনার মামলার আত্মগোপনে থাকা সেই ফয়জুর রহমান (৪০) কে প্রায় ৪ মাস পর কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব দূর্যয়মোড় এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুর ১টায় ভৈরব থানা পুলিশের সহায়তায় কানাইঘাট থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার ভোরে থানা পুলিশ ধৃত কানাইঘাট সাতবাক ইউ.পির চরিপাড়া মাঝরডি গ্রামের মৃত আবু ছিদ্দিকের পুত্র ফয়জুর রহমানের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে তার বাড়ীর পাশের কলাবাগানের নীচে পুতে রাখা একটি দেশীয় তৈরী পাইপগান ও একটি লম্বা ধারালো ছুরা উদ্ধার করা হয়েছে বলে কানাইঘাট থানা পুলিশ গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। প্রেস ব্রিফিং কালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সদর সার্কেলের এএসপি লুৎফুর রহমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ জানান গত ২১ ডিসেম্বর কানাইঘাট থানার এসআই আবু কাওছার ও এসআই বশির আহমদের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চরিপাড়া মাঝরডি গ্রামের ওয়ারেন্ট ভূক্ত আসামী ডাকাত হাবিবুর রহমান হরুহুনা কে তার বাড়ী থেকে রাতের বেলা গ্রেফতার করতে গেলে সে এবং তার ভাই পুলিশ কর্তৃক কথিত অপহরন ও গুমের স্বীকার গ্রেফতারকৃত ফয়জুর রহমান ও তার সহযোগিরা পুলিশের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় গুলা গুলিতে ডাকাত হাবিবুর রহমান হরুহুনা আহত অবস্থায় মারা যায়। ডাকাতদের হামলায় ২ পুলিশ অফিসার সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গত ২২ ডিসেম্বর থানার ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া বাদী হয়ে ডাকাত হাবিবুরের বড় ভাই ফয়জুর রহমানকে ১নং আসামী করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরো বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অধিকাংশ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। মামলার প্রধান আসামী ফয়জুর রহমানকে গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। এর মধ্যে ফয়জুর রহমানের স্ত্রী ফারহানা বেগম ঘটনার দিন ২১ ডিসেম্বর রাতে থানা পুলিশ তার স্বামীকে অপহরণ করে গুম করেছে মর্মে বাদী হয়ে সিলেটের নি¤œ আদালতে কানাইঘাট সিআর মামলা ৩৭১/১৭ দায়ের করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে উক্ত মামলা দায়েরের পর থেকে নিখোঁজ ফয়জুর রহমানকে গ্রেফতার করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া জানতে পারেন কথিত অপহরণ ও গুমের স্বীকার আত্মগোপনে থাকা ফয়জুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব শহরস্থ দূর্যয়মোড় এলাকায় অবস্থান করে সে জ্বীন, তাবীজ, কবজ ও কুফুরী কালামের মাধ্যমে কথিত কবিরাজি চিকিৎসা করে আসছে। ভৈরব থানা পুলিশের সহায়তায় একজন মহিলাকে রোগী সাজিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করার নামে ফাঁদে ফেলে গত মঙ্গলবার ফয়জুর রহমানকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পুলিশের দাবী তার কাছ থেকে কুফুরী কালামের বহু তাবীজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ভৈরব থানা থেকে কানাইঘাট থানা পুলিশ ফয়জুর রহমানকে তাদের জিম্মায় এনে গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর সূত্রধরে নিজ বাড়ীর কলাবাগানের নীচ থেকে একটি পাইপগান ও ছুরা উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। গ্রেফতারকৃত ফয়জুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করার পর গতকাল বুধবার বিকেলে আদালতে তাকে পুলিশ সোপর্দ করেছে। থানার মামলা (নং-১৩, তাং-২০১৮ইং)। এদিকে গ্রেফতারকৃত ফয়জুর রহমানের পরিবারের লোকজনদের অভিযোগ গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কানাইঘাট থানা পুলিশ গ্রাযমূলক একটি ডাকাতি মামলার আসামী ফয়জুর রহমানের ছোট ভাই লঞ্চ চালক হবিবুর রহমান হরুহুনাকে গ্রেফতার করতে তাদের বাড়ীতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে অভিযান দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে বাড়ীর লোকজনের ঝগড়াঝাটি হলে পুলিশ গুলি করে হবিবুর রহমান কে হত্যা করে তার ভাই ফয়জুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ফয়জুর রহমানকে পুলিশ অপহরণ ও গুম করে রেখেছে মর্মে ফয়জুর রহমানের স্ত্রী ফারহানা বাদী হয়ে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ ও এসআই বশির, এসআই কাওছার সহ পুলিশের বিরুদ্ধে কানাইঘাট সিআর ৩৭১/১৭ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অধিকতর তদন্ত সংস্থা পিবিআই সিলেটে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন পুরো ঘটনাটি দামাচাপা দিতে ডাকাতদলের সদস্যদের গুলিতে নিহত কুখ্যাত ডাকাত হাবিবুর রহামন হরুহুনার ভাই ফয়জুর রহমানকে তার পরিবারের লোকজন লুকিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিল। ফয়জুর রহমানকে পুলিশ গ্রেফতার করায় সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।