গোলাপগঞ্জে দুর্বৃত্তদের হাতে এসএসসি পরীক্ষার্থী খুন, আটক ৪

64

গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
গোলাপগঞ্জে আমির হোসেন (১৮) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী খুন হয়েছে। সে উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউপির বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল হকের পুত্র ও ফেঞ্চুগঞ্জ মানিককোনা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রত্যাশী। পুলিশ ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, নিহত আমির হোসের গত মঙ্গলবার রাত আট’টায় প্রতিদিনের ন্যায় স্থানীয় সবন্তপুর বাজারে বাজার করতে গেলে একই এলাকার এজাহারভূক্ত আসামীরা তাকে ডেকে সিরাজ উদ্দিন মার্কেটের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরপরই খুনিরা কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেশিয় ছুরা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপাতে থাকে। খুনিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিহত আমির হোসের প্রায় অর্র্ধ কিলোমিটার জায়গা দৌড়ায়। ঘাতকরাও দৌড়ে তার পিছু নেয় এবং সেখানে গিয়েও এলোপাতাড়ি কোপ দেয়। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে খুনিরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা নিহত আমিরকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে তাৎক্ষণিক তাকে সিলেট ওসমানীতে নিয়ে যাওয়া হলে রাত অনুমান ১০টায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রায় বছরখানের পূর্বের ক্যারাম খেলা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে নিহতের পরিবার ও খুনিদের মধ্যে বিবাদ চলছিল। এ ঘটনার যের ধরেই খুনিরা তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। মামলার এজাহারেও উল্লেখ করা হয়।
খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ কুশিয়ারা ফাঁড়ির পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে মহিলাসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন,নিহতের একই গ্রামের সাজ্জাদ আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন (৩৫),আফতাব আলীর ছেলে ফজলে রাব্বি মুন্না (২০),ইছরা আলীর ছেলে রিপন আহমদ রনি (৩৮) ও মুহন আহমদ (১৭),মৃত আব্দুল মন্নান বাবুলের স্ত্রী হাছনা বেগম (৫০)। এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মুহন আহমদ (১৭) কে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে নিহতের মা পারবিন বেগম (৪০) বাদী হয়ে ১৫জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহতের চাচা জাহেদ আহমদ জানান, আমার ভাতিজাকে হয়রানি করার জন্য খুনিরা ৬/৭ মাস পূর্বে একটি ছিনতাই মামলা করে। সে মিথ্যা ঐ মামলায় জামিনে রয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে কোন কিছু করতে না পারায় খুনিরা তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহতের মা পারবিন বেগম। থানায় মামলার এজাহারে স্বাক্ষর করতে এসে দেখা যায় তিনি হাউমাউ করে কাঁদছেন। মামলার এজাহার ভূক্ত আসামীরা হলেন, মৃত বাবুল মিয়ার ছেলে জায়েদ আহমদ (২৬), তানভির হোসেন (২৪), আলতাব আলীর ছেলে দুলাল আহমদ (৩৮), মারুফ আহমদ (২৮), মৃত গৌছ উদ্দিনের ছেলে লনি মিয়া (৪০), আনার উদ্দিন (৩৫), ইছরাব আলীর ছেলে সালেহ আহমদ (২৯), আফতাব আলীর ছেলে আব্দুল কাদির (২৬), মৃত রইছ আলীর ছেলে আনার উদ্দিন আনাই (৩৮), ইলিয়াছ আলীর ছেলে মজনু মিয়া (৩৬), পংকি মিয়ার ছেলে জাবের হোসেন (২৮), কুটু মিয়ার ছেলে রুশন মিয়া (৩৫), মৃত সজ্জাদ আলীর ছেলে জয়নাল আহমদ (৩৪),আলতাফ আলীর ছেলে মুন্না আহমদ (২২) ও মৃত বাবুল মিয়ার স্ত্রী হাছনা বেগম (৫৫)সহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২জন। বিকাল সাড়ে ৬টায় ময়না তদন্ত শেষে নিহত আমিরের ক্ষত বিক্ষত লাশের কফিনবাহী এ্যাম্বুলেন্স বাড়ীতে পৌছলে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতশত লোকজন ভীড় করেন তার লাশ দেখার জন্য। এ সময় তার স্কুলের অনেক সহপাঠীরাও উপস্থিত হয়। নিহতের গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসী তাজ উদ্দিনের ছেলে পারভেজ আহমদ খাঁন ও ভাতিজা মানিককোনা উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র মারুফ আহমদ জানায়, সে খুবই শান্ত ছেলে ছিল। লাশ বাড়ীতে পৌছার পর আমিরের মায়ের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। তার মা ভাই বোনসহ সকলের দু’চোখ অশ্র“তে ভাসছিল। কেউ তাদের সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাদের কান্না দেখে প্রতিবেশি ও স্বজনরাও নিরবে কেঁদেছে। নিহত আমিরের এসএসসি পরীক্ষার শেষের দিনে প্রিয় সহপাঠীদের নিয়ে মোবাইলে একটি সেলফি তোলে। ঘটনার পর থেকে এই সেলফি সোস্যাল মিডিয়ায় সহপাঠীরা বন্ধুর বিচার চেয়ে ভাইরাল করছে। খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিল আমির। বাদ এশা নিহতের জানা বসন্তপুর জামে মসজিদে নিহতের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করে বলেন, ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঐ ঘটনার অন্য আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিহতের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পূর্বের ক্যারাম খেলার যের ধরে এ ঘটনা ঘটছে। বিকালে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ স্বজনদে কাছে হস্তান্ত করে পুলিশ। মামলা নং-১০।