জগন্নাথপুরে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণ, ধান কাটা ও গোলায় তোলার ধুম

55

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে এবার বাম্পার বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। জমির পাকা ধান কেটে মাড়াই করে মাঠে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। তবে ব্রি ২৯ সহ সকল জাতের ধানের ফলন ভাল হলেও ব্রি ২৮ ধানে প্রথমে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ করলেও তা নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে। এতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
জানা গেছে, বিগত বছর হাওর ডুবির ঘটনায় জমির কাচা ধান তলিয়ে যায়। এতে চারদিকে হাহাকার শুরু হয়। এ সময় সরকার দরিদ্র কৃষকদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরির মাধ্যমে প্রতি মাসে জনপ্রতি ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ টাকা করে দিয়ে সারা বছর সহায়তা করায় তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এছাড়া সরকারিভাবে বিনামূল্যে কৃষকদের সার ও বীজ সহ বিভিন্ন কৃষি উপ-করণ দেয়ায় এবার কৃষকরা বিগত বছর থেকে বেশি জমি চাষাবাদ করেন। এ সময় বেশি করে জমি চাষাবাদ করতে জগন্নাথপুর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়। এরপর জমি পরিচর্যা সহ অপেক্ষার পালা শুরু হয়। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে ধান কাটা শুরু হয়। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধান কাটার ধুম পড়েছে। প্রথমে ধান কাটার মেশিন ও শ্রমিক সংকট থাকলেও বর্তমানে তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে এনামুল হক সহ স্থানীয় কৃষকরা জানান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক এসেছে এবং নিজে জমির মালিকরা তাদের পরিবারের লোকদের নিয়ে ধান কাটছেন।
১৫ এপ্রিল রবিবার সরজমিনে দেখা যায়, নলুয়ার হাওর পারের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে জমির কাটা ধান স্তুপ করে রেখে তা মাড়াই করে রোদে শুকানো হচ্ছে। রোদে শোকানোর পর ধান গোলায় তুলছেন কৃষক-কৃষানীরা।
তবে ধান পাকার প্রথম দিকে ব্রি ২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এ সময় জগন্নাথপুর কৃষি অফিসের উদ্যোগে ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রনে রোগাক্রান্ত ধানে মেশিন দিয়ে স্প্রে মারা হয় এবং দ্রুত ধান কেটে নিতে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করে জানানো হয়। এছাড়া ব্রি ২৯ সহ সকল জাতের বোরো ধানের এবার বাম্পার ফলন হওয়াতে কৃষক-কৃষাণী সহ সর্বস্তরের মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপ-সহকারি কর্মকর্তা তপন চন্দ শীল ও পৌর উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, এবার জগন্নাথপুরে মোট ২০ হাজার ৩৩৩ হেক্টর বোরো জমি চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে ব্রি ২৮ ধানের চাষ করা হয় ৯ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এতে সরকারিভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৩৩ মেট্রিক টন ধান। তবে প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফসল কৃষকদের গোলায় উঠবে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, প্রথমে ব্রি ২৮ ধানে সামান্য ব্লাস্ট রোগে আক্রমন করেছিল। এ সময় আমরা দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করি। ভ্রাম্যমান কৃষি সেবার মাধ্যামে রোগাক্রান্ত ধানে মেশিন দিয়ে স্প্রে মেরে তা নিয়ন্ত্রন করা হয়। এতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। সেই সাথে দ্রুত জমির পাকা ধান কেটে নিতে এলাকার মসজিদগুলোতে মাইকিং করে কৃষকদের অবহিত করা হয়।