তিন কারণে টেনশনে বিএনপি

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপিএই মুহূর্তে অন্তত চার ধরনের টেনশনে ভুগছে বিএনপি। দেশে ও দেশের বাইরে অন্তত তিন কারণে এই টেনশনগুলোর সূত্রপাত হয়েছে দলটিতে। ফলে কোন পথে এর আশু সমাধান হবে, এ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএনপি।
প্রথম টেনশন : দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির প্রথম টেনশন দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং এর বিষয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, এই ভেবে। বিশেষ করে আগামী ৮ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির ওপর নির্ভর করছে দলটির পরবর্তী রণকৌশল।
নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার জামিন হলে এক কৌশল, না হলে ভিন্ন। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে দলটি নতুন করে দাবি তোলার চিন্তা-ভাবনা করছে। ইতোমধ্যে একজন বুদ্ধিজীবীর দেওয়া ‘সহায়ক সরকার’ পদ্ধতির কথা বলা হলেও ভবিষ্যতে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ এই শব্দবন্ধনিতেই থাকতে চান নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির নেতৃত্বের একটি অংশ মনে করছে, আগামী রোজার ঈদের পরই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রকাশ্যে আনা উচিত। অন্য পক্ষটি মনে করছে, ৮ মে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল হলেই বিষয়টিকে সামনে আনা দরকার।
দ্বিতীয় টেনশন : অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নতুন দুই মুখকে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে টেনশন ছড়িয়ে পড়েছে দলের সর্বত্র। খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। মঞ্জু নিজে থেকে আগ্রহ না দেখালেও দলের হাইকমান্ড তাকে এক কথায় বাধ্য করেছে নির্বাচন করতে। এর ঠিক উল্টোটি ঘটেছে গাজীপুরে। এম এ মান্নান মনোনয়ন চাইলেও তাকে বাদ দিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দুই প্রার্থীর মনোনয়নই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগ্রহে হয়েছে। তার ইচ্ছেতেই নতুন মুখ বেছে নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই আগামী নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তা। কোন পদ্ধতিতে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে, এ নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত চাপা শঙ্কা কাজ করছে।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের ভাষ্য, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেও তারেক রহমান নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রার্থী বাছাই করেছিলেন। নেতাদের অনেকেই ধারণা করছেন, আগামী নির্বাচনেও তারেক রহমান তার নিজস্ব পদ্ধতিতেই দলীয় প্রার্থী বেছে নেবেন, আর এর ইঙ্গিত দিলেন খুলনা-গাজীপুর সিটির প্রার্থী নির্ধারণের মধ্য দিয়ে।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘দল মনে করেছে নতুন মুখের প্রয়োজন। সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, পরিবর্তন অনিবার্য ছিল। প্রথমত, গাজীপুরে আমাদের এম এ মান্নান শারীরিকভাবে অসুস্থ। সেখানে প্রার্থী পরিবর্তনের এটিও একটি কারণ। আর খুলনায় পরিস্থিতির কারণেই মঞ্জুকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’
তৃতীয় টেনশন : খালেদা জিয়ার মুক্তি তরান্বিত করতে কার্যকর কর্মসূচি নির্ধারণ। এক্ষেত্রে রয়েছে কেন্দ্র ও তৃণমূলের ইচ্ছাগত পার্থক্য। কেন্দ্র মনে করছে, আগামী রোজার পরই যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও নির্বাচনকেন্দ্রিক ঐক্য। আর এজন্য অপেক্ষা করা এবং চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী জুনের পরই আন্দোলনে আরও গতি আনা হবে।
তৃণমূল মনে করে, এখনই খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত করতে কর্মসূচি দেওয়া উচিত, যা ঈদের পর আরও গতি পাবে। যদিও তৃণমূলের এই চাহিদা নিয়ে কেন্দ্র এখনই কোনও সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না। তবে এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক টেনশন রয়েছে।
চতুর্থ টেনশন : দলটির বর্তমান দুশ্চিন্তায় নতুন করে যোগ হয়েছে দলটির আন্তর্জাতিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রত্যাশা। দলটির কূটনৈতিক উইংয়ের নেতারা মনে করেন, দেশের বাইরে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী দেশ ও সংস্থাগুলো মনে করছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আগামী নির্বাচন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে বা পরাজিত হলে এ সম্পর্কিত গুণগত পরিবর্তনগুলো প্রকাশ করা। আর এখনও দলের বিদেশ নীতি চূড়ান্ত না করায়, এ নিয়েও যথেষ্ট চাপ রয়েছে বিএনপির।
বিএনপির ফরেইন উইংয়ে কাজ করেন, এমন একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, ‘সাধারণত বিএনপির বিদেশ নীতির মৌলিক অবস্থান হলো— সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গেই শত্রুতা নয়। তবে এ বিষয়ে ২০১৬ সাল থেকে দলের ভেতরে কাজ চলছে। একটি বড় টিম এ নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো পরিষ্কার করা যাবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘চাপে তো শুধু বিএনপিই না, সারাদেশের মানুষই চাপে আছে। এই স্বৈরাচার সরকারের সময়ে কেউ চাপের বাইরে নেই।’