অর্পিত সম্পত্তির ভোগ দখল নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

31

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহুল আলোচিত অর্পিত সম্পত্তি ভোগ-দখলে নিয়ে নতুন আইনের খসড়া নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস। তবে তাৎক্ষণিক জবাবে দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সবাইকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ‘খ’ তফসিলের সম্পত্তির বিষয়ে রিট করার সুযোগ থাকলেও নতুন আইনে রিট করার সুযোগ থাকছে না। এরই মধ্যে এসংক্রান্ত সার্কুলার আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদের মাগরিবের নামাজের বিরতীর পর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসের ক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আরও জানান, ’সংসদ সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে ‘ক’ তফসিল আর ‘খ’ তফসিল নিয়ে একটা বিভ্রান্তি ছিল। এই বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা নতুন আইনের খসড়া করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগে ‘খ’ তফসিলভুক্ত ভূমি দখলদারিত্বের সুযোগ একেবারেই বন্ধ করে দেয়ার পর্যায়ে ছিল।
তিনি বলেন, নতুন বিধিতে উল্লেখ করে দিয়েছি, ‘খ’ তফসিল ভুক্ত ভূমির ব্যাপারে রিট করার সুযোগ থাকলেও রিট চলবে না। এই কথা বলে একটি সার্কুলার ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। অচিরেই এটা বিতরণ শুরু হবে। কাজেই এনিয়ে আর বির্তক থাকবে না। তিনি এ ব্যাপারে সংসদে একদিন ৩০০ বিধিতে বিস্তারিত বক্তব্যে তুলে ধরার আগ্রহ প্রকাশ করলে স্পীকার তাঁকে সেই সুযোগ প্রদানের আশ্বাস দেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে পঞ্চানন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, সরকারি জিম্মা থেকে অর্পিত সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া হচ্ছে। নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, অর্পিত সম্পত্তি কিনে সেখানে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, কারখানা করা যাবে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারা জোট বেঁধে এই সম্পাত্তি ক্রয় করতে পারবেন। এসব বিধি রেখে অর্পিত সম্পত্তির বিধিমালা প্রস্তুত করেছে ভুমি মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ দুই লাখ ২০ একর। এসব সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে আদালতে এক লাখ ১৯ হাজার মামলা রয়েছে। অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে আমরা জানি, যে যত বেশি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসিআর কাটতে পারত সে তত বেশি সম্পত্তির মালিক হতো। যার বেশি ডিসিআরের সঙ্গে কিংবা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তারা ডিসিআর কেটে নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ’ক ও খ’ তফসিল নামে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ক তফসিলে উচ্চ আদালতে মামলা হলেও খ তফসিলে কোন মামলা হবে না। যার সম্পত্তি তার কাছে চলে যাবে। সে রেকর্ড পাবে, খাজনাও দিতে পারবে। কিন্তু খ তফসিলে সম্পত্তির মালিক তাদের জমি রেকর্ড হচ্ছে না, খাজনাও দিতে পারছে না। ক তফসিল নিয়ে হাইকোর্টে পর্যন্ত মামলা চলছে। সেখান থেকে যার পক্ষে রায় আসবে সেই জমির ভোগ দখল করবে।
পঞ্চানন বিশ্বাস আরও বলেন, এইদেশে যে সকল ভূমি অর্পিত সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত হয়েছিল সেটা শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তা কিন্তু নয় প্রধানমন্ত্রীর দাদা-দাদির সম্পত্তিও পাকিস্তান আমলে অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যদি একটি পরিবারের ৫ ভাই থাকেন, তাদের মধ্যে ৪ ভাই এদেশ ত্যাগ করেছেন।
কিন্তু তাদের ২০ বিঘা সম্পত্তি থাকলে তার সবটুকুই অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে ওই পরিবারে যে সদস্য দেশে রয়েছেন তিনি আর ওই সম্পত্তির লিজ পাচ্ছে না। তারা তাদের জমি ভোগ করতে পারছেন না।