নাইকো মামলার রায় শিগগিরই

23

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শিগগিরই আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে (ইকসিড) নাইকো মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এই সপ্তাহে আদালত রায়ের দিন ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী ড্রিক স্মিথ পেট্রোবাংলার কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়েছেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দুর্ঘটনার কারণে নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে পেট্রোবাংলা।নাইকোর গাফিলতির জন্যই এই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে বাপেক্স দাবি করে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ ও গাফিলতি নিয়ে মতভেদ হয়। নাইকো ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা দাবি করে, এ বিষয়ে তাদের কোনও গাফিলতি হয়নি। এই ক্ষতিপূরণ দেবে না বলে নাইকো লন্ডনে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে (ইকসিড) মামলা করে। একইসঙ্গে বাপেক্সও এই ক্ষতি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফেনী গ্যাসক্ষেত্রের পাওনা অর্থ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে নাইকো আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল এবং ১৬ জুন দু’টি মামলা করে। একটি গ্যাসের বকেয়া বিল আদায় সংক্রান্ত (আরবি/১০/১৮), অন্যটি টেংরাটিলা বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ থেকে অব্যাহতি চেয়ে (আরবি/১০/১১)। মামলা পরিচালনার জন্য নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান ফলে হগ (ভড়ষবু যড়ধম) এলএলপিকে (ওয়াশিংটন ডিসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পক্ষের মামলা পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠান ফলে হগ জানিয়েছে, আগামী শনিবারের মধ্যে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ইকসিড নাইকোর সব দুর্নীতির বিষয় বিবেচনা করেই রায় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষে রায় গেলে নাইকোর এদেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করেই ক্ষতিপূরণ নিতে হবে।একইসঙ্গে তারা ফেনী ক্ষেত্রের গ্যাস বিক্রির জন্য যে অর্থ পাবে তা দিতে হবে না।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ফলে হগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে মামলার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে মামলাটিতে কী রায় হতে পারে, আইনজীবী সে বিষয়ে তিনটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে পাঠানো চিঠিতে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফায়েজউল্লাহ এনডিসি জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে মামলাটিতে বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছেন। আইজীবী বলছেন, গত ১২ মার্চ দুর্নীতি ও দায় বিষয়ে ইকসিড ট্রাইব্যুনাল খসড়া রুলিং তৈরির কাজ করছে। একইসঙ্গে আশা করেছেন শিগগিরই মামলাটির কার্যক্রম শেষ হবে।’
চিঠিতে যেসব সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে তারমধ্যে প্রথম সম্ভাবনা হচ্ছে, নাইকোর দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আরবিট্রেশন কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারেন।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, ট্রাইব্যুনাল নাইকোর দুর্নীতি খুঁজে পাক না বা পাক নাইকোর দায় ও ক্ষতিপর্যায়-পর্যন্ত আরবিট্রেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন।
তৃতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, অপ্রত্যাশিতভাবে যদি নাইকোর কোনও দুর্নীতি ও ব্লো আউটের ক্ষেত্রে কোনও দায় খুঁজে না পায়, সেক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম শেষ করে দিতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালিশি আদালত আইনজীবীর সম্ভাবনা-১ ও ২ সম্ভাবনাকে বিবেচনায় রেখে রায় দিলে নাইকো মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে যাবে। অন্যদিকে তিন নম্বর বিবেচনা করলে নাইকো মামলার রায় বাংলাদেশের বিপক্ষে যাবে।
এর আগে নাইকো মামলা যথাযথভাবে না পরিচালনা করায় ইকসিড বাংলাদেশকে ফেনী গ্যাস ক্ষেত্রে নাইকোর প্রাপ্ত অর্থ পরিশোধের আদেশ দেন।এতে বাংলাদেশের ক্ষতির তথ্য যথাযথভাবে উপস্থাপন না করায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ঝুলে যায়।এরপর আইনজীবী পরিবর্তন করে নতুন করে আবার বাংলাদেশের পক্ষে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এই মামলার আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈম গণি বলেন, ‘মামলাটিতে দু’টি বিষয় দেখা হচ্ছে। প্রথমত, এই ক্ষতির জন্য নাইকো দায়ী কিনা? তাহলে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার বিষয়টি আসবে। অন্যদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে এই কাজ পেয়েছি কিনা, নাইকো তাও দেখা হচ্ছে।’ ইকসিড নাইকোর সব দুর্নীতির বিষয় বিবেচনা করেই রায় দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।