পুলিশের প্রতিবেদনে তথ্য ॥ সারাদেশে ২১৯ জঙ্গি আত্মগোপনে

23

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশের জঙ্গি সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশের জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিশেষায়িত ইউনিট। ওই প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে ৪ হাজার ৩১ জঙ্গিকে। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০২২। জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে ১৩৪৬। জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে ২১৯ জঙ্গি। অভিযানে ৭০ জঙ্গি নিহত হয়েছে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে। কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুণছে ২৬ জঙ্গি। এসব জঙ্গি হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের। গত ৫ বছরে বিভিন্ন মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছে ২৩৬ জঙ্গি। এর মধ্যে বিদেশে পালিয়ে গেছে ১০ জঙ্গি। জঙ্গিবিরোধী এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের বিষয়ে অর্ধ শতাধিকের অধিক মামলা দায়ের হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিচালিত অভিযানে জঙ্গিদের সর্বশেষ তথ্য চিত্র সংবলিত এই বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশের জঙ্গিবাদ বিশেষায়িত ইউনিট। জঙ্গিদের সম্পর্কে তৈরি করা এই প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, যে পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের জঙ্গিদের চিহ্নিত করা হয়েছে সেই সব জঙ্গি সংগঠনগুলো হচ্ছে সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন, হরকত-উল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীর, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্য। এসব জঙ্গি সংগঠনের চিহ্নিত জঙ্গিদের মধ্যে ৩ হাজার ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব, পুলিশ ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বিভিন্নস্থানে জঙ্গি আস্তানা থেকে এসব জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামিনে মুক্তি পাওয়া ১৩৪৬ জঙ্গির মধ্যে যে ২১৯ জঙ্গি আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়া জঙ্গিরা ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক নজরদারির মধ্যে খুব বেশি একটা সুবিধা করতে পারছে না জঙ্গিরা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে যেই ৭০ জঙ্গি নিহত হয়েছে তার মধ্যে গুলশান হলিআর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলাকারী, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ জামাতে হামলাকারী, কল্যাণপুর, আজিমপুর, মিরপুরের রূপনগর, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া, সিলেটের আতিয়ামহলসহ তিনটি জঙ্গি আস্তানা, চট্টগ্রামের সিতাকুন্ডু জঙ্গী আস্তানায় নিহত জঙ্গীরা রয়েছে। নিহতদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে মেজর জাহিদ, তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, মাঈনুল ইসলাম মুসা ও তানভির কাদেরীর নাম অন্যতম।
জঙ্গি সম্পর্কে এই বিশেষ প্রতিবদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয় দেশব্যাপী। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট একযোগে মাঠে নামে। মিরপুরের রূপনগরে নিহত হয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সেকেন্ডইন কমান্ড মেজর জাহিদ। নব্য জেএমবির প্রধান ও হলিআর্টিজানের মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী নিহত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায়। তানভীর কাদেরী আজিমপুরে, মারজান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। হলিআর্টিজানের পর উল্লেখিত শীর্ষ জঙ্গী ছাড়াও সিলেটের আতিয়া মহল, কুমিল্লা, বিমানবন্দর সংলগ্ন দক্ষিণখান, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, রাজধানীর কল্যাণপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বন্দুকযুদ্ধে জঙ্গীরা নিহত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান হলিআর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করে সরকার। এরপর দেশব্যাপী পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়। শুধুমাত্র গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও নব্য জেএমবির ৫৭ জঙ্গী নিহত ও গ্রেফতার করা হয় ৪১ জনকে, যারা শীর্ষ জঙ্গি হিসেবে পরিচিত। গুলশান হলিআর্টিজান বেকারিতে হামলার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী বড় ধরনের ২২টি অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সক্রিয় কর্মীসহ ৫৭ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এছাড়া এসব জঙ্গিবিরোধী এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের বিষয়ে অর্ধশতাধিকের মতো মামলা দায়ের হয়েছে, যা তদন্তাধীন আছে। জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলা চালাতে তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গিদের অবস্থান ও গতিবিধি শনাক্ত করা হয়।
জানতে চাইলে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গিবাদকে আমরা এখন মিশন হিসেবে দেখছি এবং সেভাবেই কাজ করছি। কারণ গুলশান হলিআর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ওই ঘটনার পর পুলিশ জঙ্গিবাদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছে। কারণ জঙ্গীরা পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যকে হত্যা করেছে। জঙ্গীরা হলিআর্টিজানে হামলার মাধ্যমে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। ওই ঘটনার পর পুলিশ একের পর এক জঙ্গী ডেরায় সফল অভিযান পরিচালনা করে দেশকে জঙ্গীবাদের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছে। পুলিশের এসব অভিযান এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। তারপরও জঙ্গী একেবারে শেষ হয়ে গেছে এটাও বলছি না। জঙ্গী আছে তবে তারা ঘাপটি মেরে আছে। পুলিশের নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। তারা ভাল করে জানে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলেই তারা ধরা পড়ে যাবে। কিছু জঙ্গী ইন্টারনেটে নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এরা চেষ্টা করবে আবার নাশকতা করার। যাতে তারা কোন ধরনের নাশকতা বা অপতৎপরতায় লিপ্ত না হতে পারে সেই জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।