কালবৈশাখী ঝড়ে সর্বস্বান্ত

19

বছরের প্রথম কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে গত শুক্রবার। প্রথম আঘাতেই কাবু হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরের অর্ধেক অঞ্চল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে। ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিতে মোট ছয়জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে প্রধান মৌসুমি ফল আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টমেটো, ভুট্টাসহ অনেক ফসল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। গরমের সময় গরম পড়ছে অনেক বেশি। কোথাও কোথাও মরুপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। শীতের সময় শীতের তীব্রতাও বাড়ছে। এবার শীতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পারদ নেমে গিয়েছিল সব রেকর্ড ছাড়িয়ে। শুরু হয়েছে কালবৈশাখী। আসতে পারে টর্নেডোর একের পর এক আঘাত। অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগগুলো আটকানো যাবে না। কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সে কারণেই দেশে দেশে তৈরি হচ্ছে জলবায়ু তহবিল। বাংলাদেশেও রয়েছে জলবায়ু তহবিল। এখন প্রয়োজন প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা। ঝড়ে প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামাঞ্চলের অতি দরিদ্র মানুষের নড়বড়ে ঘরগুলো। শুক্রবারের ঝড়ে সিলেটে ঘরচাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গৃহনির্মাণে উপযুক্ত সহায়তা দিয়ে এই দরিদ্রদের পাকাপোক্ত ঘর করে দেওয়া গেলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলে উপকূল রক্ষা বাঁধ আরো উঁচু ও শক্ত করে নির্মাণ করতে পারলে এবং পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যুও অনেক কম হবে। দুঃখের বিষয়, এসব কাজে আমাদের অগ্রগতি এখনো খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। এই আত্মঘাতী ধীরগতি দূর করতে হবে। ভারতে সরকারিভাবে গৃহযোজনা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য পাকাপোক্ত ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার বেশ বড়সড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদেরও অবিলম্বে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। গত বছর বন্যায় হাওরাঞ্চলে ফসলের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, সেই ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি হাওরবাসী। এবারও যদি একই রকম অবস্থা হয়, তাহলে তাদের অস্তিত্বই সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। জানা যায়, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে এ বছরও দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই হাওরবাসীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।
উত্তরাঞ্চলে কালবৈশাখীর আঘাতে অনেক দরিদ্র পরিবারই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের চিহ্নিত করে কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হবে। ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় কৃষি সহায়তা দিতে হবে। সর্বোপরি স্থায়ী উদ্যোগগুলো দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।