মশক নিধনে সচেতনতা

32

মশার উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফগার মেশিন নামের কামান দাগানো হচ্ছে। নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হচ্ছে। কিন্তু সব কিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মশা বহাল তবিয়তেই আছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অনবরত শক্তি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। তাহলে মশার হাত থেকে নিষ্কৃতির উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশাবিরোধী যুদ্ধ সঠিকভাবে চালানো হচ্ছে না। মশার ডিম, শুককীট বা লার্ভা, মুককীট বা পিউপা ধ্বংস না করে মশাবিরোধী অভিযানে শুধু পূর্ণাঙ্গ মশাকে টার্গেট করা হচ্ছে। এতে পূর্ণাঙ্গ মশা কিছু পরিমাণে মরলেও নতুন করে জন্মানো মশা সেই স্থান পূরণ করছে। আবার মশার ওষুধের কার্যকারিতা কিংবা সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন আছে। নকল-ভেজাল ওষুধ প্রয়োগের অভিযোগও আছে।
মশার বংশবৃদ্ধিতে পানির প্রয়োজন হয়। বাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত পাত্র বা কৌটা, ডাবের খোল, এমনকি ফেলে দেওয়া পলিথিনেও যদি সামান্য পানি জমে থাকে, তাতেও মশার বংশবৃদ্ধি হতে পারে। তা ছাড়া নালা-নর্দমা, খাল ইত্যাদি পরিষ্কার না করায় সেগুলো মশার বংশবৃদ্ধির আদর্শ স্থান হয়ে আছে। এমনকি অনেকের ঘরের ভেতরেও মশার উত্তম প্রজননস্থল থাকে। ফ্রিজের নিচে একটি পাত্রে পানি জমে, তাতেও মশার বংশবৃদ্ধি হয়। বাথরুমে, রান্নাঘরে জমিয়ে রাখা পানিতে মশা প্রজনন করতে পারে। অনেকে ঘরে পানি দিয়ে ছোট গাছ বা ফুল সাজিয়ে রাখে, তাতেও মশা বংশবিস্তার করে। মশার উৎপাত বা সংখ্যা কমাতে হলে প্রথমেই এর বংশবৃদ্ধির উৎসগুলোতে হাত দিতে হবে। এ কাজে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সমানভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশনের পক্ষে ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধন করা কখনোই সম্ভব নয়। তদুপরি তাদের লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাব আছে। যেটুকু আছে সেটুকু ব্যবহারেও রয়েছে নানা রকমের ফাঁকিজুকি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও মশার বংশবৃদ্ধি দ্রুততর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিষয়টি আমাদের নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণত বর্ষায় মশার উপদ্রব চরমে ওঠে। তাই বর্ষা শুরুর আগেই মশা নিধনে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। নগরীর প্রায় ভেঙে পড়া ড্রেনেজব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। বহু সমস্যার কারণ নগরীর খালগুলো দ্রুততম সময়ে সংস্কার করতে হবে। নিয়মিত সঠিক জায়গায় সঠিক ওষুধ সঠিক পরিমাণে ছিটাতে হবে। নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পানি জমতে পারে এমন পরিত্যক্ত বস্তু বাড়ির আনাচকানাচে থাকলে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের ভেতরে কোনো পাত্রে যেন কয়েক দিন পানি জমে না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ছোটখাটো খানাখন্দ ভরাট করে ফেলতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। এসব কাজে নাগরিকদের সংগঠিত ও সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে।