মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দেয়া হবে না -প্রধানমন্ত্রী

48

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আবার নৌকায় ভোট দিলে দেশবাসীকে সুন্দর জীবন উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আবার নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দলের সভাপতি এ কথা বলেন।
গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর এটি শেখ হাসিনার চতুর্থ সমাবেশ। গত ৮ ফেব্র“য়ারি বরিশাল, ২২ ফেব্র“য়ারি রাজশাহী এবং ৩ মার্চ খুলনায় জনসভা করেন শেখ হাসিনা।
পটিয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতির জনসভাকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগ গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। সমাবেশে তিন লাখ মানুষের উপস্থিতির ঘোষণা দিয়েছিল তারা।
ঘোষণা অনুযায়ীই ব্যাপক জনসমাগম হয়। বুধবার বেলা তিনটা থেকে জনসভা শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে শুরু করে জনসভা স্থলে।
বেলা ১২টার মধ্যেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তীব্র রোদ্র উপেক্ষা করে বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান নেন জনসভায় যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা।
প্রায় ১৭ বছর পর চট্টগ্রামের পটিয়া আসা শেখ হাসিনার সফরের আগে মোড়ে মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর তোরণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুল ধরে সরকার সমর্থকরা। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও একইভাবে তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরে।
আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলের উন্নয়ন, বিএনপি সরকারের আমলের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি নৌকায় ভোট পাই, আগামীতে ক্ষমতায় আসি আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে।’
‘নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হবে। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা আমার এই কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ গৃহহারা থাকবে না। কেউ কুঁড়ে ঘরে থাকবে না। যাদের জমি নেই, তাদের খাস জমি দেব। যাদের টাকা নেই, তাদেরকে টাকা দেব।’
সমাবেশ স্থলে এসে প্রধানমন্ত্রী মোট ৪২টি উন্নয়ন প্রকল্প ‘উপহার’ দেন চট্টগ্রামবাসীকে। এর মধ্যে ১৪টির উদ্বোধন এবং ২৮টির ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই উন্নয়নগুলো আপনাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা উড়াল সেতু করে দিচ্ছি। কর্ণফুলি তৃতীয় সেতু করে দিচ্ছি। সার্বিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম জেলা ও চট্টগ্রাম বিভাগ যদি দেখেন গ্রামীণ পযায় পর্যন্ত উন্নয়ন হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশকে উন্নয়ন করতে চাই। আমার একটাই চিন্তা এ দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। বাবা-মা বুকের রক্ত দিয়ে গেছে।’
‘আমি চাই প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সবাই উন্নত সুন্দর জীবন পাবে।’
স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতিপত্র পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। বিশ্ব সভায় মাথা উচু করে, কারো কাছে হাত পেতে নয়। কেউ ভিক্ষুকের অপবাদ দিতে পারবে না।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে : সরকারি চাকরিতে কোটা কমিয়ে আনার আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদেরকেও একটি বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দেন, এই কোটায় হাত দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, এই কথাটা ভুললে চলবে না। কাজেই তাদেরকে আমাদের সম্মান দিতেই হবে। তাদের ছেলে, মেয়ে নাতি পুতি পর্যন্ত যাতে চাকরি পায়, সেটার জন্য কোটার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমাদের এই বিশেষ ব্যবস্থা করতেই হবে। কারণ তাদের আত্মত্যাগের কারণেই তো আজকে এই চাকরির সুযোগ, আজকে এই স্বাধীনতা, আজকে মানুষের উন্নয়ন।’
‘যদি দেশ স্বাধীন না হতো তাহলে কোনো উন্নয়ন হতো না, কারও কোনো চাকরি হতো না, উচ্চ পদেও কেউ যেত পারত না, এই কথা ভুললে চলবে না।তাই তাদেরকে আমরা সম্মান দেই।’
বিএনপির সমালোচনা : বিএনপি সরকারের আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসলে উন্নয়ন হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে কী করে? মানুষ খুন-লুটপাট। তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না। ’
নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৪ সালে ও সরকার হটানোর নামে ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় সহিংসতার কথাও স্মরণ করে দেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশে শায়েখ আবদুর রহমান বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গি সৃষ্টি করেছে। তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। এই চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার করার সময় উদ্ধার করা হয়েছে।’
‘কে করেছে এটা? তার ছেলে তারেক রহমান। ক্ষমতায় থাকতে কালো টাকা বানিয়েছে আবার কালো টাকা সাদা করেছে। এত টাকা আসে কোথা থেকে?’
‘মানি লন্ডারিং করেছে, দুর্নীতি করে টাকা পাচার করেছে। তারা দুর্নীতি করে ধরা পড়েছে। এ জন্য সিঙ্গাপুর কোর্টে বিচার হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে টাকা এনে বাংলাদেশের টাকা বাংলাদেশের জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
‘এই মাটিতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ স্থান হবে না। বাংলাদেশ হবে শান্তির দেশ। ’
বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোরাআন শরিফে লেখা আছে এতিমের হক কেড়ে নিও না। এতিমের সম্পদ লুট করো না, এতিমকে তার ন্যায্য হক দিয়ে দাও। সেই কোরআন শরিফের নির্দেশ না মেনে এতিমের টাকা এসেছে, একটা টাকাও এতিমকে দেয়নি। সব নিজেরা আত্মসাৎ করেছে।’
‘মামলা তো আওয়ামী লীগ সরকার দেয়নি। দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। …সেই মামলায় আজ শান্তি হয়েছে। সেই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন এই মামলা করেছে, কোর্ট রায় দিয়েছে। কোর্টের রায়ও তারা মানে না। এটাই তাদের চরিত্র।’
‘তারা আইন মানবে না, কানুন মানবে না, কিছুই মানবে না। মানুষের সম্পদ কেড়ে খাবে, এতিমের টাকা কেড়ে খাবে, শাস্তি দিল কেন এ জন্য হুমকি-ধামকি আন্দোলন।’
বিএনপি সরকারের আমলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামে বিএনপিরই নেতা জামালউদ্দিনকে হত্যার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা শুধু আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তা নয়, নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও ছাড়ে নাই।‘
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে জনসভা সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম পৌঁছেন বেলা ১১টায়। শুরুতেই বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। জাহাজের আদলে এই কমপ্লেক্সে আছে বঙ্গবন্ধুর ৪১ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের তৈরি আবক্ষ ভাস্কর্যও।