রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক চাপ জরুরী

41

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা জানে না, আবার কখনো নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারবে কি না। তাদের সামনে জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই। ভবিষ্যতের কোনো আশা নেই। এই নির্যাতিত, হতাশ ও জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাহীন মানুষ সহজেই আইএস, আল-কায়েদা বা এমনই কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর খপ্পরে চলে যেতে পারে। ইতিমধ্যে তেমন কিছু আলামতও দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে শুধু মিয়ানমার বা বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তা বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান-অস্ট্রেলিয়া বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে শনিবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও তেমন আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন কোনোমতেই আর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে। তিনি যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেছেন, সেই মঞ্চে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিও উপস্থিত ছিলেন। সিডনির যে মিলনায়তনে এই সম্মেলন চলছিল, তার কয়েক শ গজ দূরেই শত শত মানুষ সু চিবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল। শুধু তা-ই নয়, অস্ট্রেলিয়ার একজন সাবেক বিচারকসহ পাঁচজন আইনজীবী শুক্রবার দেশটির আদালতে সু চির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলাও করেছেন। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই নেত্রীর কি এর পরও হুঁশ ফিরবে না?
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য দায়মুক্তি থাকার কারণে অস্ট্রেলিয়ার আদালত সু চির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা কোনো ধরনের সাজার নির্দেশ দিতে পারবেন না। কিন্তু এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে দুনিয়াব্যাপী মানুষের ক্ষোভ-ঘৃণার যে প্রকাশ ঘটেছে, তা কি তিনি অনুভব করতে পারছেন না? মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী যে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটি কি মিয়ানমারের নেত্রী বা তাঁর দেশ উপলব্ধি করতে পারছে না? একই রকম উদ্বেগ এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ অনেক বিশ্বনেতাও প্রকাশ করেছেন। আঞ্চলিকভাবেও এ ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা আশা করব, অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দ দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে যেকোনো উদ্যোগে তাঁর দেশ সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। একই রকম আশ্বাস বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে। এখন সম্পূর্ণ বিষয়টি নির্ভর করছে মিয়ানমারের ওপর।
বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করার পর তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, এখনো প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি; বরং নানাভাবে প্রত্যাবাসন বিঘিœত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরো জোরালো ভূমিকা রাখা জরুরি হয়ে উঠেছে।