কনস্টেবলের জন্য ১০ লাখ, এসআইয়ে জন্য ২০ লাখ আর পিয়নের জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় ॥ আমার সময় এটা হলে আমি আত্মহত্যা করতাম

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঘুষ ছাড়া কোনো সরকারি চাকরি হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার অভিযোগ, পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য ১০ লাখ এবং উপপরিদর্শক বা এস আইন পদের জন্য ২০ লাখ টাকা লাগে। পিয়নের চাকরি পেতেও ১০ লাখ টাকা লাগে।
শনিবার দুপুরে বগুড়া পর্যাটন মোটেলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার সময় এটা হলে আমি আত্মহত্যা করতাম।’
বেলা সাড়ে ১১টায় হেলিকপ্টার যোগে বগুড়া পুলিশ লাইনসে অবতরণ করেন এরশাদ। পরে সেখান থেকে গাড়িতে করে প্রতিনিধি সম্মেলনের সভাস্থলে উপস্থিত হন। বেলা দুইটার দিকে তিনি সেখানে বক্তব্য রাখেন।
দুনীতি এখন সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে অভিযোগ করে এরশাদ বলেন, ‘একশ কোটি টাকার কাজ শুরু হলে সেখানে দুইশত কোটি টাকা খরচ হয়। কিছু লোকদের সেকেন্ড হোম হয়েছে মালয়েশিয়া। ক্ষমতার রদবদল হলে ওসব ব্যক্তিরা পালিয়ে যাবে মালয়েশিয়ায়।’
‘শেয়ার মার্কেটে টাকা হারিয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে। শেয়ার বাজারের টাকাগুলো বড়লোক নিয়েছে। এখন ব্যাংক ডাকাতি হয়, ব্যাংকেও টাকা নেই। এমনকি আমার ব্যাংকেও টাকা নেই।’
‘পৃথিবীর কোথায়ও শুনিনি সেন্ট্রাল ব্যাংকে ডাকাতি হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। অনেক তদন্ত হয়েছে, কিন্তু কারা এর পেছনে তা এখনও জানা যায়নি।’
শিক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কীভাবে একজন মন্ত্রী সহনীয় পর্যায়ে ঘুষ নেয়ার কথা বলেন? এটা কেউ বলতে পারে ? ওই কথা বলার পরও এখনও তার মন্ত্রিত্ব রয়েছে।’
প্রশ্নপত্র আগেও ফাঁস হয়েছে, এমন মন্তব্য করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সমালোচনা করেন এরশাদ। বলেন, ‘আশ্চর্য লাগে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বলেছেন, অতীতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।’
হতাশা থেকে যুবকরা মাদকে জড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। বলেন, ‘ইয়াবা, ফেনসিডিল খেয়ে যুবকরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা এখন পানের দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে।’
‘যুবকরা এসব মাদকে কেন আটকে গেছে? কর্মসংস্থান না থাকায় হতাশায় যবুকরা নেশাগ্রস্থ হচ্ছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করলে সমাজ ধংস হয়ে যাবে।’
সরকারের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, ‘আমার সময় ঢাকা থেকে ছয় ঘন্টায় রংপুরে গিয়েছি। এখন উন্নয়নের মহাসড়কে সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। আমার সময় মানুষ খুন হয়নি, আর এখন দেখেন।’
নিজ জেলা রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। বলেন, ‘সবাই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কলেজের তালা ঝুলছে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, কী হয় দেখি।’
জনগণ দেশের এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায় দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘আমার বয়স ৮০ কিংবা ৯০ বড় কথা নয়। জাতীয় পাটিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাই।’
‘বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবীদ আমি। আমার বয়স হয়েছে, এটা আমি মানি না, বিশ্বাস করি না। আমার একটাই লক্ষ্য আগামীতে জাতীয় পাটিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া।’
‘আপনারা আমার সাথে আছেন কি না বলুন’-এমন বক্তব্য দিয়ে জাতীয় পাটিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাইলে আগামী ২৪ মার্চ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানান জাপা চেয়ারম্যান। বলেন, ‘জাতীয় পাটি ক্ষমতায় এলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সেইফ (নিরাপদ) থাকবে। আমরা কাউকে জেলে দেবো না।’
জাতীয়পাটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। বগুড়া জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুর ইসলাম জিন্নাহ, সাধারণ সম্পাদক এমপি নুরুল ইসলাম ওমর প্রমুখ।