সৌদি আরবে কাজের সংকটে “ওয়াকার্স ভিসায়” যাওয়া সাড়ে ৫ লাখ বাংলাদেশী

42

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দীর্ঘদিন সুযোগ সংকুচিত থাকার পর গত বছর সাড়ে পাঁচ লাখ বাংলাদেশি ওয়াকার্স ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যান। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশ সেখানে নির্দিষ্ট চাকরিতে যোগ দিতে পারছে না। ফলে তৈরি হয়েছে সংকট। অসহায় মানুষগুলো প্রতিদিনই ভিড় করছেন বাংলাদেশ দূতাবাসে।
যোগাযোগ করা হলে রিয়াদে বাংলাদেশ মিশনের লেবার কাউন্সিলর মোহাম্মাদ সারওয়ার আলম বলেন, ‘এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে এবং প্রতিদিন বাংলাদেশিরা দূতাবাসে আসছেন। আমাদের পক্ষে যত দূর সম্ভব চেষ্টা করা হয় তাদের সমস্যা দূর করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘এটি অভিবাসীদের অসচেতনার জন্য ঘটছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা জানেন, যে চাকরির কথা বলে সৌদি আরবে আসছেন সে চাকরিতে তারা যোগ দিতে পারবেন না।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেবার কাউন্সিলর তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে অনেকে ফ্রি ভিসা নিয়ে আসেন এবং তারা জানেন, তাদের সৌদি আরবে নিজে থেকে চাকরি খুঁজে নিতে হবে। কিন্তু এটি এত সোজা নয়। কারণ, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম এবং নতুন কাজের সুযোগ কম।’
এখানে দূতাবাসের ভূমিকা কী জানতে চাইলে মোহাম্মাদ সারওয়ার আলম তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে বাংলাদেশ দূতাবাস যে কোনও চাকরির এটাস্টেশন (প্রত্যায়ন) করার পরে ভিসা ইস্যু হওয়ার কথা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটাস্টেশন ছাড়াই ঢাকায় কাগজপত্র তৈরি করা হয় এবং সৌদি দূতাবাস ভিসা ইস্যু করে। আমরা বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছি এবং দূতাবাসের এটাস্টেশন ছাড়া কোনও ভিসা ইস্যু না করার অনুরোধ জানিয়েছি।’
তিনি জানান, বিষয়টি তারা (সৌদি কর্তৃপক্ষ) অনুধাবন করেছে এবং তারা ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে কাজ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূতাবাসের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে কয়েকটি পক্ষ এ বিষয়টি থেকে লাভবান হয় এবং গোটা লোকসানের ভাগ পান হতভাগ্য অভিবাসীরা।’
তিনি জানান, একজন অভিবাসী কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে আসেন এবং যখন তারা সঠিক কাজ খুঁজে না পান তখন বিপদে পড়ে দূতাবাসে আসেন।
এটাস্টেশন বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সঠিক নিয়ম হচ্ছে কোনও সৌদি নিয়োগকর্তা তার লোকের প্রয়োজন হলে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ দূতাবাসকে জানায়। দূতাবাস সরেজমিনে নিয়োগকর্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তার আবেদন এটাস্টেশন করার পরে ঢাকায় লোক পাঠানোর কাজ শুরু হয়।’ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এখানকার একটি দালাল চক্র দূতাবাসের এটাস্টেশন ছাড়াই কাগজপত্র তৈরি করে এবং সৌদি দূতাবাসে ভিসার জন্য জমা দেয় বলে জানান তিনি।
এটাস্টেশন জাল করে করে সৌদি দূতাবাসে জমা দেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি জাল করার সুযোগ নেই। কারণ, এটি অনলাইনে জমা দেওয়া হয় এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে গেলেই জানতে পারে কোনটি এটাস্টেশন করা এবং কোনটি নয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন প্রচারণা চালানো উচিত এটাস্টেশন ছাড়া কেউ যদি এখানে চাকরি নিয়ে আসেন, তার সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।’