রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক চাপ

38

মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের আশ্বাস ও চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। এর আগে অনেকেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে মিয়ানমার মুখে যা-ই বলুক, কার্যত তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে না। এখন সে আশঙ্কাই যেন সত্য হতে চলেছে। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের যে গ্রামগুলো আগে বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এখন সেখানে সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। হেলিপ্যাড, রাস্তাঘাট বানানো হচ্ছে। তাহলে চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গারা যাবে কোথায়? তারা কি কেউ সেনাঘাঁটির মধ্যে ফিরে যেতে চাইবে?
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিঙ্গাপুরের সহযোগিতা চেয়েছেন। আগেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য হওয়ায় ধারণা করা হয় যে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো এ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে মিয়ানমারের আচরণে উল্টোটাই লক্ষ করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল সেনা সমাবেশ ঘটানোয় উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছিল। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও জানা যায় যে এখনো সীমান্তরেখার কাছেই রয়েছে তাদের সেই সেনা প্রস্তুতি। অনেকেই ধারণা করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে তারা আবারও যেকোনো সময় উত্তেজনা বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে। তাই বাংলাদেশকে যেমন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে, তেমনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় আলোচনায় জোর দিতে হবে। জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে দীর্ঘদিন ধরে ভরণপোষণ করা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব একটি কাজ। তা ছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় তারা যেভাবে বসবাস করছে, তাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ধসের শিকার হয়ে বহু রোহিঙ্গার প্রাণহানি হতে পারে। তাই তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে মিয়ানমারের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে হবে। আসিয়ান দেশগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। খাদ্যাভাবে যদি একজন রোহিঙ্গাও মারা যায়, তা হবে সভ্য দুনিয়ার জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। আমরা আশা করি, মিয়ানমারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করবে এবং রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভূমিতে সামরিক স্থাপনা নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করবে।