আবারো হুইসেল বাজবে লাতুর ট্রেনে ॥ ১৬ বছর পর কুলাউড়া-শাহ্বাজপুর রেল লাইনের কাজ শুরু

47

জুড়ী থেকে সংবাদদাতা :
দীর্ঘ ১৬ বছর পর বন্ধ থাকার পর পরিত্যক্ত কুলাউড়া-–শাহ্বাজপুর রেল লাইনের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতের কলকাতা কালিন্দী রেল নির্মাণ কোম্পানী রেল লাইনের কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ রেলওয়ের নিকট থেকে কাজের সাইট বুঝে নেয়। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর পরিত্যক্ত এ রেল লাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় এবং পুনরায় ট্রেন চালুর খবরে জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে কুলাউড়া- শাহ্বাজপুর পরিত্যক্ত রেল লাইনের সংস্কার কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু প্রায় ৩ বছর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে উক্ত রেল লাইনের সংস্কার কাজ। অবশেষে বাস্তবে রেল লাইনের কাজ শুরু হল। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৬ সলের ৪ ডিসেম্বর আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সাথে কুলাউড়া-শাহ্বাজপুর সেকশনটি যুক্ত হয়। ১৯৫৮-৬০ সালে এ রেল লাইনটি পুনর্বাসন করা হয়। পরবর্তীতে অব্যবস্থাপনা ও সংস্কার অভাবে এ রেল লাইনে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। বিধ্বস্ত রেল লাইনটি ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠলে ২০০২ সালের ৭ জুলাই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পড়েন যোগাযোগ সংকটে। তাতে বেদখল হয়ে পড়ে ৬টি রেল স্টেশনসহ কোটি কোটি টাকার সরকারি ভূমি। পুনরায় এ রেল লাইন চালু হলে জনসাধারণের যাতায়াত সুবিধা ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি গুরুত্বহীন হয়ে পরা কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন প্রাণ ফিরে পাবে। পরিকল্পনা কমিশনের মতে, এ লাইন ভারতীয় সীমান্তে দ্বৈত গেজে রূপান্তরিত করলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। রেল লাইনটি পুনরায় চালুর খবর শুনে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হাই জানান, পূর্ব প্রতিশ্র“তি অনুযাযী ফেব্র“য়ারীর শুরুতেই কুলাউড়া-শাহ্বাজপুর রেল লাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কলকাতার কালিন্দী রেল নির্মাণ কোম্পানীকে সাইট হস্তান্তর করা হয়। ব্রড গেজ এ রেল লাইনটি চালু হলে কুলাউড়া থেকে শাহ্বাজপুর পর্যন্ত ৫টি ট্রেন চলাচল করবে। লোকাল ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর ট্রেনের সাথে ভারতীয় ট্রেনও চলবে। বন্ধ থাকাকালীন সময়ে রেলওয়ের জমি জবর দখল করে গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা। এগুলো উচ্ছেদের লক্ষ্যে রেলওয়ের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নোটিশ দেয়া হলে অনেকেই নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরানো শুরু করে। সরেজমিনে এ সেকশনের দক্ষিণভাগ ও শাহ্বাজপুর রেল স্টেশন এলাকা ঘুরে ভারতীয় কোম্পানীর লোকজনকে সংস্কার কাজ করতে দেখা গেছে। শ্রমিকরা জানায়, প্রথমে তাদেরকে স্টেশনের ইয়ার্ড প্রস্তুতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ জন্য তারা প¬্যাটফর্মের পুরাতন ইট তুলে মাটি ড্রেসিং করছে। অন্তত ১-২ মাস এ কাজ চলবে। এরপর শুরু হবে মূল লাইনের ড্রেসিং কাজ। ব্রীজ, স্টেশন ভবন নির্মাণসহ পর্যায়ক্রমে রেল স্ট্রেক স্থাপনের কাজ করা হবে। লাইনের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় অবৈধ দখলদাররা তড়িগড়ি করে পাকা, আধাপাকা অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলছে। রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান জাবির জানান, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয় ঋণে ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হবে। তন্মধ্যে ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইন। এ প্রকল্পটি বাস্তাবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেকে) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। মোট ব্যয়ের ১২২ কোটি টাকা দেশীয় অর্থায়নে এবং বাকি ৫৫৬ কোটি টাকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে প্রদান করবে।