ভোলাগঞ্জ ও শ্রীপুর পাথর কোয়ারির গর্ত ধসে ৬ শ্রমিক নিহত, দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

37

স্টাফ রিপোর্টার :
কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে গর্ত ধসে মাটি চাপায় ৬ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। পৃথক এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ভোলাগঞ্জের হাজিরডেগনার সীমান্ত এলাকায় গর্ত ধসে ৫ জন ও গতকাল সোমবার দুপুরে শ্রীপুরে গর্ত ধসে আরো ১ জন মারা যান।
পৃথক এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, সুনামগঞ্জের মুরাদপুর এলাকার আসকর আলীর পুত্র রুহুল আমিন (২২), একই এলাকার হযরত আলীর পুত্র মতিবুর (৩২), জামালগঞ্জের কলকটা গ্রামের আতাবুর রহমান (৩০) দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ছলেরবন গ্রামের আশিক আলী (৩০), ও সুনামগঞ্জের রইছউদ্দিনের পুত্র মঈন উদ্দিন (৩২) ও দেলোয়ার হোসেন (২৬)। আহতরা হচ্ছেন- রুহেল (১৮), রফিকুল (১৬) ও ফিরোজ আলী (৪৫)। এদের মধ্যে ফিরোজ আলীল অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। অপর আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
ভোলাগঞ্জে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাথর উত্তোলনে সংশ্লিষ্ট কোয়ারির শ্রমিক সর্দার আব্দুর রউফকে (৫০) আটক করেছে। এই গর্তের মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোম্পানিগঞ্জে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গর্তে আরো লাশ মাটি চাপা পড়ে আছে বলে জানান তারা। ভোলাগঞ্জ কোয়ারির রাতে জেনারেটর চালিয়ে ওই গর্ত থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার ভোলাগঞ্জের হাজিরডেগনা সীমান্ত এলাকায় পাথর উত্তোলনের গর্তেও মাটি ধসে পড়ে। রাতেই দু’জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আহত অবস্থায় আরো ৩ জনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে ওই গর্তে অভিযান চালিয়ে আরো দুটি লাশ উদ্ধার করে। এরপর বিকেল তিনটায় একই গর্ত থেকে আরেকটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানা ওসি (তদন্ত) দিলিপ নাথ বলেন, পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গর্ত মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে কোয়ারি ধসে শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় গর্তের লেবার সর্দার আব্দুর রউফকে আটক করেছে পুলিশ। লেবার সর্দার আব্দুর রউফকে আটক করা হয়েছে বলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাঁন মো. মঈনুল জাকির জানান, গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় উপজেলার শ্রীপুর কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনের সময় গর্ত ধসে ১০/১২ জন শ্রমিক আহত হন। এদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে দেলোয়ার হোসেন (২৬) নামের এক শ্রমিক মারা যান। দেলোয়ার জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের লালা গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র। শ্রীপুর কোয়ারিতে স্থানীয় নাজিম উদ্দিনের মালিকানাধীন গর্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, প্রাণহানি ঘটনা গর্তের মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারিতে টিলা ও গর্ত ধসে অন্তত ৪০ শ্রমিক মারা গেছেন। এরমধ্যে গতবছরের ২৩ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা ধসে ৫ জন, ১ ও ১১ ফেব্র“য়ারি একই টিলা ধসে ২ জন, শাহ আরেফিন টিলা ধসেই ২ ও ৬ মার্চ, ২০ জুলাই এবং ২৬ অক্টোবর আরো ৪ জন মারা যান।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে পাঁচ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্র“য়ারি) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিন সদস্যের ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আবুল হাসনাতকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে কোম্পানীগঞ্জ সার্কেল এএসপি মতিয়ার রহমানকে রাখা হয়েছে । তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।’
এদিকে জেলা প্রশাসনের কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও এডিসি মো. আশরাফুল আলমকে রাখা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটিকেও সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিসি রেভিনিউ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।