রোহিঙ্গা সমস্যা রোধে কঠোর উদ্যোগ

28

মিয়ানমারের কথা ও কাজের অসংগতি নতুন নয়। চুক্তি করে তা না মানার দৃষ্টান্তও রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এবারও মিয়ানমার যে সেই পুরনো পথেই হাঁটছে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, গত নভেম্বর থেকে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের কমপক্ষে ৫৫টি গ্রাম বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে যে একসময় বসতি ছিল তার কোনো চিহ্নই এখন আর অবশিষ্ট নেই। এটি মিয়ানমার কোনোভাবেই করতে পারে না, বিশেষ করে যখন সেখানে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। গণহত্যার আলামত ধ্বংস করতেই মিয়ানমার এই কাজ করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এমন অভিযোগ ওঠার পর মিয়ানমার সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য, অর্থাৎ নতুন করে ঘরদোর তৈরি করার জন্যই মাটি সমান করা হচ্ছে। এটি যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার হাস্যকর প্রয়াস, তা সহজেই অনুমেয়। তা ছাড়া এ পর্যন্ত পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্রে নতুন করে ঘরদোর তৈরির কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। তাই গণহত্যার আলামত ধ্বংস করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা জরুরি হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের কথা ও কাজে যে অসংগতি রয়েছে তার আরো একটি প্রমাণ প্রাণভয়ে এখনো প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা। শুক্রবারও দুই শতাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তারা জানিয়েছে, হামলা, নির্যাতন, হুমকি সবই অব্যাহত আছে। অন্তত এটা তো সত্য যে মিয়ানমার সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করার কাজটিও করছে না। তাহলে প্রত্যাবাসন হবে কিভাবে? রোহিঙ্গাদের একদিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, অন্যদিকে তারা আবার পালিয়ে আসতে থাকবে? প্রত্যাবাসন কবে নাগাদ শুরু হবে, তা-ও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাশূন্য করার লক্ষ্য নিয়েই জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করা হয়েছিল। তাই দ্বিপক্ষীয় সমাধানসূত্র খোঁজার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো সাবধান থাকতে হবে। যা করতে হয় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা অত্যন্ত সীমিত পরিসরে মিয়ানমারের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শিগগিরই ইউরোপীয় ইউনিয়নও কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। তার পরও যদি মিয়ানমার সুবুদ্ধির পরিচয় না দেয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরো কঠোর করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তা ক্রমেই জোরদার করাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। আমরা আশা করি, মিয়ানমার তা উপলব্ধি করবে এবং রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।