কালো পতাকা বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আলাল সহ গ্রেফতার ৩৫

27

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সাংবাদিক, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভকালে পুরো এলাকা যানজটে স্থবিব হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে জলকামান থেকে পানি ছিটাতে হয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও দলটির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ অন্তত ৩৫ জনকে আটক করেছে।
পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সরকারী কাজে বাধা দান ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের ঘটনায় পল্টন থানায় পুলিশের তরফ থেকে একটি মামলা দায়ের হচ্ছে। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার সাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২টিতে। পুলিশের দায়ের করা এসব মামলায় আসামির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আসামিদের মধ্যে দুই শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। আগামী সোমবার ঢাকায় সব থানা এলাকায়, সব মহানগর ও জেলা সদরে প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
শনিবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বেলা এগারোটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা কর্মসূচী পালনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল দশটার দিকে কয়েকশ’ নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে হাজির হন। সেখান থেকে তারা কালো পতাকা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করতে থাকেন। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সংসদ সদস্য নীলোফার চৌধুরী মনিসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করার কারণে পুরো এলাকা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। পথে পথে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। পুলিশ বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য নেতাকর্মীদের অনুরোধ করে। রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে দিতে বলে। কিন্তু তাতে নারাজ নেতাকর্মীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন আটকে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বাধা দিলে তারা এক পর্যায়ে যানবাহন ভাংচুর করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা চলতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ এ সময় জলকামান থেকে পানি ছিটায়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ সরকারী কাজে বাধা দেয়া এবং রাস্তা অবরোধ করার দায়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ অনেককেই আটক করে। বেলা এগারোটা থেকে শুরু করে দুপুর বারোটা নাগাদ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকে। ঘণ্টাখানেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম শিবলী নোমান জনকণ্ঠকে বলেন, নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারীসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। পুলিশ ওই ঘটনায় অন্তত ৩৫ জনকে আটক করেছে। সরকারী কাজে বাধা দান ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের দায়ে পল্টন থানায় পুলিশের তরফ থেকে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আটককৃতদের অনেককেই ওই মামলায় আসামি করা হতে পারে।
এদিকে পুলিশের এমন দাবি ভিত্তিহীন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কোন প্রকার উস্কানি ছাড়াই হামলা করেছে। পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী ও সাবেক সংসদ সদস্য নীলোফার চৌধুরী মনিসহ অনেকেই আহত হয়েছেন।
শনিবার বিকেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৩০ জন নেতাকর্মী।