দুর্নীতি মুক্ত দেশ হউক

44

বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোর দিক থেকেই নয়, অন্য অনেক দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে। তেমনি একটি অগ্রগতির স্বীকৃতি এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বা টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণাসূচকে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে ১৭তম স্থানে উঠে এসেছে। এটি উল্লসিত হওয়ার মতো কোনো অর্জন নয় আবার ছোট করে দেখার মতো বিষয়ও নয়। দুর্নীতি একটি সংক্রামক ব্যাধির মতো। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রে একবার দুর্নীতির বিস্তার ঘটলে তার বৃদ্ধি রোধ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্নীতি কমিয়ে আনা হয় আরো কঠিন। বাংলাদেশ সেই কঠিন কাজটি করতে পারছে, এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি আনন্দের সংবাদ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতির ধারণাসূচকে আমাদের অবস্থান ছিল নিচের দিক থেকে ১ বা ২ নম্বরে। অর্থাৎ দুর্নীতিতে আমরা ছিলাম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সেখান থেকে ১৭তম স্থানে উঠে আসা অবশ্যই একটি বড় অর্জন। প্রতিবছর দু-তিন ধাপ করে এগোতে পারলেও পাঁচ বা ১০ বছর পর বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই ওপরে বা মোটামুটি মর্যাদাপূর্ণ একটি স্থানে চলে আসবে, এমনটি আশা করাই যায়।
দুর্নীতি শুধু যে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বাড়ায় তা-ই নয়, রাষ্ট্রের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টাকেও অসার করে দেয়। জনসেবামূলক রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের সুফল থেকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হয়। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে যায়। তাই কোনো দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই দেশটির সর্বগ্রাসী দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে। বাংলাদেশে দুর্নীতির লাগাম টানার প্রচেষ্টা ক্রমেই সফলতা খুঁজে পাচ্ছে। কোনো দেশে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করার জন্য দেশটিতে সুশাসনের অভাবকেই মূলত দায়ী করা হয়। সুশাসনের অভাব হলে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ যেমন কমে যায়, তেমনি দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। ধীরে হলেও দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের যে অগ্রগতি সূচিত হয়েছে, তাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং ক্রমেই আরো জোরদার করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের কর্মকাণ্ড এরই মধ্যে দুর্নীতিবাজদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হতে পারে। দুদকের কর্মপরিধি কিভাবে আরো বাড়ানো যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। দুদককে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে এবং তাদের লোকবল বাড়াতে হবে। দুর্নীতির অর্থ কোথায় যায়, কী কাজে লাগে, তা দেখার পাশাপাশি আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন ব্যয়ের উৎসগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বিদেশে অর্থপাচার ঠেকাতে হবে। হুন্ডি বা অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হবে। আর এসব কাজে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সরকারের সব কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। আমরা চাই, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হয়ে উঠুক।