সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ॥ দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলছে

91

স্টাফ রিপোর্টার :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ এর পথচিত্র অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকা আজও মুখ্য। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ মাংস ডিম ও দুধ উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলামের উপস্থাপনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম শাহী আলম। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, এবার লাঙ্গলের জোয়াল কাঁধে পড়বে। এতদিন বাবার টাকায় চলেছো এখন আর তা চলবে না, এবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সময় স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে বেশি কিছু বলার নেই। তারউপর গ্র্যাজুয়েটদের মুখও দেখতে পারছি না। তিনি বলেন, একটি গান আছে “দূরের মানুষ কাছে আসুক” এই গান গাইলেও আমার কাছে আসতে পারবে না, আমিও তোমাদের কাছে যেতে পারবো না।”
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আজকের এই বর্ণাঢ্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি তোমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপনের স্বীকৃতি হিসেবে সনদপত্র লাভের মধ্য দিয়ে আজ তোমাদের জীবনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। নিজেদেরকে তোমরা জ্ঞানে-দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছ। পেশাগত শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে শাণিত করার অনন্য সুযোগ পেয়েছ। এই সবই সম্ভবপর হয়েছে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে তোমাদের অনেক ঋণ জমেছে দেশ ও জাতির কাছে। এখন তোমাদের সেই ঋণ পরিশোধের পালা। গোটা দেশ আজ তোমাদের মুখের দিকে চেয়ে আছে। সমগ্র জাতি তোমাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্র্যাজুয়েটরা একযোগে কাজ করবে, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘলালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে অগ্রসেনানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে-এই প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপতি।
নিজেকে হাওর এলাকার মানুষ পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকে যারা গোল্ড মেডেল পেয়েছে তাদের মধ্যে দুজন হাওর এলাকার লোক। আমি নিজেও হাওর এলাকার। আমি যেহেতু আসছি তাই হাওর একটু বেশিই পেলো। আমরা বৃদ্ধ জঞ্জাল। আমরা চলে গেলে তোমরা দেশকে আরো সুন্দর ভাবে চালাতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে আজকের এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। সমাবর্তন একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সাধনা ও সিদ্ধির সাথে সমাজের আশা-আকাঙ্খার মেলবন্ধন ঘটে থাকে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যে স্ফূরণ ঘটেছিল, তা দু’দশক ধরে নানা আন্দোলন-সংগ্রাম, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাস্তব রূপ লাভ করে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের পৌরোহিত্যে ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ ও বিকাশকে অবারিত করে। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এবং ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বলেন, কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন আমাদের কৃষিবিদগণ। নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারেও ভূমিকা রাখছেন। কৃষিতে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কৃষকপর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পচনশীল কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও বহুমুখীকরণেও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ আরো বলেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে বিশ্বায়ন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যুগ। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকতে হলে তার স্থানিক, জাতিক ও বৈশ্বিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এটি সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক উপযোগিতা, মান ও আন্তর্জাতিক চারিত্র্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে। আমি জেনে আনন্দিত, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে শিক্ষা ও গবেষণা তৎপরতায় এই চাহিদাগুলোর বিশ্বস্ত প্রতিফলনে বিশেষ যতœবান। এখানকার শিক্ষা কারিকুলাম নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে শেষে ১৭৩৩ জন ¯œাতক, ৫১৫ জন এম এস এবং একজন পিএইডি ডিগ্রীধারীর সনদের স্বীকৃতি দেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় রাষ্ট্রপতি দুই জন কৃতি শিক্ষার্থীর হাতে চ্যান্সেলর স্বর্ণ পদক এবং দুই জন কৃতি শিক্ষার্থীর হাতে ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক তুলে দেন।
এর আগে রাাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে গতকাল বুধবার বেলা ২টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট (বিজি-৬০১) যোগে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। বিকেল ৫ টায় বিমানযোগে আবার ঢাকায় ফিরে যান তিনি। এদিকে রাষ্ট্রপতির সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা সিলেটে কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল।