বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা

30

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসেছে। লক্ষ্য রয়েছে, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং সামনে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা আরো দুই শ কোটির মতো বেড়ে যেতে পারে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যাও ২০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাদের খাদ্যচাহিদা বাড়বে, অন্যদিকে তাদের আবাসিক ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে কমবে কৃষিজমি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। উপকূলের একটি বিরাট অংশ সাগরে তলিয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্ববাসের প্রবণতা দিন দিনই বাড়ছে এবং তা আরো বাড়তে থাকবে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলেও একদিকে বাড়বে বন্যার প্রকোপ, অন্যদিকে বাড়বে খরার প্রবণতা। এসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে নেমে আসবে এক বিপর্যয়কর অবস্থা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাড়বে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিও। সে অবস্থায় স্থিতিশীল উন্নয়ন কতটা ভিত্তি পাবে?
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলেও বাংলাদেশকে এই চ্যালেঞ্জগুলো সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। সংগত কারণেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এই বাস্তবতা তুলে ধরেছেন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে। ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) পরিচালনা পরিষদের ৪১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে মঙ্গলবার মূল বক্তা হিসেবে তিনি স্থিতিশীল উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। উন্নয়ন সহযোগীরাও সাধ্যমতো আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। আইএফএডি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যাপ্রবণ ছয়টি জেলার ২৫টি উপজেলার তিন লাখ তিন হাজার পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলাগুলো হচ্ছে গাইবান্ধা, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর। ছয় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার, এর মধ্যে ছয় কোটি ৩২ লাখ ডলার দেবে আইএফএডি। এই প্রকল্প নিঃসন্দেহে সংশ্লিষ্ট এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অনুরূপ আরো অনেক প্রকল্প দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নিতে হবে। একই সঙ্গে দেশের কৃষি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিজমির ক্রমসংকোচন বন্ধ করতে হবে। গ্রামাঞ্চলেও সমতলে আবাসন বৃদ্ধির বদলে উল্লম্ব বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা বাড়াতে হবে, যাতে কৃষি খাতে থাকা ছদ্ম-বেকারত্ব কমিয়ে আনা যায়। কৃষির আধুনিকায়নের ওপরও জোর দিতে হবে।
স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে আশু, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি এই তিন রকম পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন রক্ষায় টেকসই আবাসনসহ সেখানকার কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায়ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকারের সময় উন্নয়নের যে ধারার সূচনা হয়েছে, তাকে টেকসই ও কার্যকর রূপ দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সব কিছুই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করা হবে।