হবিগঞ্জের বাহুবলে প্রশাসন ও গ্রামবাসী মুখোমুখি, দিনভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০

64

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের বাহুবলে চা বাগানের জায়গা দখলমুক্ত করাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ইদ্রিছ মিয়া (৬৫) নামে একজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল ও অন্যান্যদের বাহুবল এবং হবিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীসহ প্রশাসন ও গ্রামবাসী মুখোমুখি অবস্থানে আছে। উভয় পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষে গ্রামবাসীকে হঠাতে পুলিশ দফায় দফায় গুলি ও টিআর সেল নিক্ষেপ করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের নিকটবর্তী ১৭ একর ৫৭ শতক ভূমি শত বছর ধরে গ্রামবাসী গোচারণভূমি, গাছ বাগান ও বাড়িঘর স্থাপন করে ভোগদখল করে আসছে। সম্প্রতি ফিনলে চা কোম্পানীর রশিদপুর ডিভিশনের আওতাভূক্ত রামপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ উক্ত ভূমি তাদের লীজকৃত দাবি করে দখলে নেয়ার পায়তারা শুরু করে। এ অবস্থায় সুন্দ্রাটিকি গ্রামবাসীর পক্ষে আমির উল্লা, উস্তার মিয়া, আকল মিয়া, আব্দুল হাই, তাহির মিয়া, জাহিদ মিয়া ও আউয়াল মিয়া বাদী হয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় গ্রামবাসী তাদের দখলীয় ভূমি থেকে বাড়িঘর ভেঙে উচ্ছেদের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে আদালত বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এ বিষয়টিকে ঘিরে বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উভয় পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা চালান। এ অবস্থায় উক্ত ভূমিতে গ্রামবাসী নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করছে বলে বাগান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করলে বুধবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জসীম উদ্দিন ও বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলীর নেতৃত্বে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। এ অবস্থায় গ্রামবাসীও জড়ো হলে উভয় পক্ষে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে উল্লেখিত লোক আহত হয়। এরপর থেকে দিনব্যাপী উভয় পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, গ্রামবাসী চায় পুরো জমিটা খালি থাকুক আর বাগান কর্তৃপক্ষ চায় তারা তাতে প্লান্টেশন করবে। এ প্রেক্ষাপটে উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি কয়েকবার তাদের দু’পক্ষের সাথে বসেছি। শেষ পর্যন্ত ৭/৮ দিন আগে সিদ্ধান্ত হয় গ্রামবাসীর জন্য ৮ একর জায়গা পতিত রেখে বাকী জায়গা বাগান কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিতে। এছাড়া ঘর-বাড়ি যা যেভাবে আছে সেভাবে রাখতে। এ ব্যাপারে আমরা গ্রামবাসীকে লীজ নেয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতেও বলি। কিন্তু তারা উপজেলা বা জেলা প্রশাসনে কোন আবেদন করেনি। এ অবস্থায় গ্রামবাসী অবৈধভাবে উক্ত ভূমিতে বেড়া দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে। খবর পেয়ে আমরা আজ ঘটনাস্থলে আসি। এখানে এসে গ্রামবাসীকে সরে যাওয়ার জন্য এক ঘন্টা সময় দেই। তারা আমাদের কথা শুনেনি। তারা পুলিশের উপর আক্রমনের পায়তারা করে, কজন পুলিশ আহত হয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সর্টগান ও গ্যাস গানের গুলি ছুঁড়ে।