আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…..

34

জেড.এম. শামসুল :
ভাষা আন্দোলনের অব্যাহত পথ চলাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত সভা সমাবেশ বিক্ষোভ মিছিল ঢাকা সহ সারাদেশে বিস্তীর্ণ হতে থাকে। রাষ্ট্রভাষা চুক্তি বাস্তবায়নে সংগ্রাম পরিষদ ধাপে ধাপে কর্মসূচী ঘোষণা, কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক অব্যাহত রাখে। অব্যাহত আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সংগ্রাম কমিটির কার্যক্রম চলতে থাকে। বাঙালি জাতির মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করতে সুদূর ১৯৫১ সালের ২৩ ফেব্র“যারী রাষ্ট্রভাষা চুক্তি কার্যকর করার দাবী জানিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বিজ্ঞানী ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন এবং প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার চুক্তি বাস্তবায়নে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীন এই আবেদন কার্যকর করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বলেন যে, কেরাণীদের কেউ কেউ বাংলা ভাষায় নোট লিখতে অসুবিধায় পড়তে পারেন। প্রতিনিধিরা জবাবে বলেন, কিছুকালের জন্য তাদেরকে ইংরেজী বাংলায় নোট লেখার নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। যাতে এ সময় তারা বাংলা শিখে নিতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, মিউনিসিপ্যালিটি, জেলা বোর্ড প্রভূতি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে এখনও বাংলা ভাষায় না হওয়ার অভিযোগ করলে ইব্রাহিম খাঁ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে বাংলা ও ইংরেজী নোট লেখার জন্য নির্দেশ দেবেন বলে জানান। অব্যাহত আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ এদিন ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ঢাকা জেলা বোর্ডের হলে পূর্ব পাকিস্তান আরবী রাষ্ট্রভাষা সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার ১০০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এতে উর্দ্দুর বিরোধীতা করে আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়। এ দিনের সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা যদি নিতান্তই ধর্মীয় উদ্দেশ্য হয়, তবে উর্দ্দুর পরিবর্তে আরবীই অগ্রাধিকার পাবে। অর্থাৎ উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী ক্ষীণ করে দেয়াই ছিল এ দাবীর প্রেক্ষাপট। ১৯৫১ সালের ১৬ মার্চ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পূর্ববঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক অধ্যাপক সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে বাংলাভাষা অবহেলিত হলে ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করার কথা বলেন। এ ভাষণের পর বাংলার ছাত্র সমাজ ও শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের স্পৃহা বেড়ে উঠে। ১৯৫১ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটি এ দিনটিকে রাষ্ট্রভাষা পতাকা দিবস হিসাবে পালন করে। এ পতাকা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ভাষা আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়। পতাকা দিবসের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচী সাংগঠনিক তৎপরতা এগিয়ে চলতে থাকে। এ বছরের ১১ এপ্রিল এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি কর্তৃক কমিটির আহবায়ক আব্দুল মতিন একটি স্মারকলিপি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্যদের কাছে প্রেরণ করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয় পাকিস্তানে যদি একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তাহলে সেটা হবে অবশ্যই বাংলা। আর যদি একাধিক ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়, তাহলে বাংলা হতে হবে তার অন্যতম। স্মারকলিপিতে বলা হয় যতদিন বাংলাভাষার ন্যায়সঙ্গত দাবীকে প্রদেশ কেন্দ্রে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা না হবে ততদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তথা ছাত্র সমাজ ক্ষান্ত হচ্ছে না। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।