নগরীতে ছাত্রদলের সাথে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০, যানবাহন ও দোকানপাট ভাংচুর

164

স্টাফ রিপোর্টার :
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি’র চেয়ারপার্সন এর বিরুদ্ধে কারাদন্ডের রায় ঘোষণার পরপরই সিলেট নগরীতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল ও ক্ষমতাসীনদল আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এ সময় সংঘর্ষ তামাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এগিয়ে আসলে পুলিশের সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রদল। সংঘর্ষ চলাকালে বন্দর ও জিন্দাবাজার এলাকায় বেশ কিছু যানবাহন ও দোকানপাঠ ভাংচুর করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জিন্দাবাজার, সুরমা পয়েন্ট এলাকা, সিটি পয়েন্ট, বন্দরবাজার ও কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় দফায় দফায় এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫-২০ জনের মত আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পৃথক এ সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে নগরীর রাজপথে নামে পুলিশের রায়াট কার (এপিসি) চলতে দেখা গেছে।
সংর্ঘষে আহতরা হচ্ছেন, আলাউদ্দিন ও শামীম নামে দুই পুলিশ সদস্য, শেখ রাসেল শিশু কিশোর সংঘ দক্ষিণ সুরমা লালাবাজর ইউপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান, সিলেট জজ আদালতের পান দোকানি ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর নয়াগ্রামের বাসিন্দা জয়নুল ইসলাম। আহতদের মধ্যে জয়নুল ইসলামের বাম পা ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া পুলিশের দুই সদস্যও ওসমানি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং ওয়াহিদুর রহমান প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেন।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে এক যুবককে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে অন্য পক্ষকে গুলি করতে দেখা গেছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় তার হাতে একটি একনলা বন্দুক ছিল। এ অস্ত্রটি তার নিজের নামে লাইসেন্স করা। ছাত্রদলকর্মীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে তিনি এই অস্ত্র নিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায়ের পরপরই স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা আদালত এলাকা থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় জেলা পরিষদে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে সংঘর্ষে জড়ায় উভয়পক্ষ। এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে নগরীর চৌহাট্টার দিক থেকে জিন্দাবাজার পয়েন্টে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ এসে ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। পুলিশের দাবি এরা ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এসময় পুরো সড়ক জোরে আতঙ্ক বিরাজ করে। সড়ক দিয়ে তখন চলাচলকারীরা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। এসময় জিন্দাবাজার এলাকায় দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে জেলা ছাত্রদলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ মকসুদের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল সহকারে এসে জিন্দাবাজার পয়েন্টে অবস্থান নেন। তারা সেখানে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে রাস্তা অবরোধ করেন। এসময় তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে ও ভাংচুর চালায়। তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিপক্ষে শ্লোগান দেন। এরপর বিকেল ৫ টার দিকে পুলিশ এসে ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পুলিশ আসার পর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। তখনই ৩ যুবককে আটক করা হয়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। আটককৃতদের পরে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিন্দাবাজার পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান দাবি করেন, রায়ের পরপরই বিএনপি-জামায়াত ও শিবির কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নগরীতে জড়ো হয় এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করার সময় পুলিশ গুলি শুরু করে। এরপর সশস্ত্র আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিলে হামলা করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রায়ের পরপরই নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। ভাংচুরকৃত গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিএজি অটোরিক্সা নং, সিলেট-থ ১১-৪৬৬৯, সিলেট-থ ১২-২০৫৩ ও নোয়া গাড়ি নং ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৪৯১৯, প্রইভেট কার নং ঢাকা মেট্রো-ক-০৩-৭০২৮ গাড়িগুলোসহ আরো বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়। আর এসকল গাড়ি সিলেট জজ আদালত প্রাঙ্গণে ছিল।
উল্লেখ্য, সরকারি টাকা আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন। তারেক রহমানসহ মামলার অপর ৫ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪ আসামি হলেন, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে এই রায় ঘোষণা করা হয়। সাজার পাশাপাশি প্রত্যেক আসামীকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে নগরীর মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের অবস্থান। তল্লাশি চালানো হয় বিভিন্ন যানবাহন। রায়কে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ছিল কৌতুহল। তবে বর্তমানে নগরীতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।