দীঘলি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সমস্যার অন্ত নেই

142

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
বিশ্বনাথের দীঘলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। মেডিকলে অফিসারসহ ৪টি পদের মধ্যে ৪টি পদই শূন্য, আসবাবপত্র সঙ্কটসহ রয়েছে আরও নানা সমস্যা। চিকিৎসা সেবায় সরকার আন্তরিক হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দিঘলী উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ফলে ১৯২১ সালের দিকে নির্মিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুটি ভবনই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘ দিনেও এ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। ফলে চিকিৎসা সেবা চলছে ডক্তর কোয়ার্টারে। তবে, সংস্কার নয়, জরুরী ভিত্তিতে দীঘলীর ওই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পুন:নির্মাণের দাবি করেছেন চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সচেতন মহল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বনাথ ও সদরের জালালাবাদ এবং ছাতক উপজেলার দুই শতাধিক রোগীরা চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনই ভিড় জমান দিঘলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবার মান ভালো থাকলেও পরবর্তীতে জনবল সঙ্কটে আস্তে আস্তে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। বিগত ২ বছর ধরে মেডিকলে অফিসার, উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ফার্মাসিষ্ট ও এমএলএসএস পদটি শুন্য রয়েছে। যে কারণে ডেপুটেশনে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডাক্তার লাকী খাতুন নামের এক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।
আশ-পাশে কোন হাসপাতাল না থাকায় ছাতকের দিঘলী, মাধবপুর, রামপুর, দত্তপুর, পুরানবাজার, শিবনগর, শেখপুর, তকিপুর, বুড়াইরগাঁও, গোবিন্দনগর ও বিশ্বনাথের মান্দাবাজ, বশিরপুর, তালুকজগৎ, সাহেবনগর, উদয়পুর, খালপার, পুরান দিঘলী, পাঠানোগাঁও এবং সিলেট সদর-জালালাবাদ উপজেলার লালখাঁ, টুকেরগাঁও, নোয়াগাঁও, মৌলভীরগাঁও, আমানতপুর, আকিলপুরসহ তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুই শতাধিক নারি ও শিশুরা চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে আসেন। সপ্তাহের শুক্রবরা ছাড়া বাকি ৬ দিনই রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত টিনসেডের সেই আধাপাকা দুটি ভবনই দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে ১৯৮৬ সালে তৎকালীণ বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের দেওয়া একতলা বিশিষ্ট ডক্টর কোয়াটার ভবনেই এখন চলছে চিকিৎসা সেবা। বর্তমানে ওই ডক্টর ভবনের অবস্থাও করুণ।
দিঘলী গ্রামের বাসিন্ধা, গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক বাবু তাপস দাশ পুরকায়স্থ বলেন, এলাকার গরিব-অসহায় মানুষের কল্যাণে ১৯২০/২১ইং সালের দিকে তাঁর নানা রায়বাহাদুর সিতামোহন দাশের ছোট ভাই তৎকালিন সিলেটের একমাত্র এমবিবিএস ডাক্তার সুন্দরী মোহন দাশ এখানে হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন। জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালের সকল সংকট দূর করতে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
স্থানীয় সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাহজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, তিন উপজেলাবাসীর প্রাচীনতম একটি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জরুরী ভিত্তিতে পুন:নির্মাণসহ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া জরুরী।
দেড় বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন জানিয়ে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেপুটিশনে থাকা উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাক্তার লাকী খাতুন বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন যে পরিমান রোগী সেবা নিতে আসেন সে পরিমানে ঔষধ সরবাহ হয় না। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, পানিও নলকূপন সহ আরো অনেক কিছুর অভাব রয়েছে।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পুন:নির্মাণ জরুরি দাবি করে বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাক্তার মো. আবদুর রহমান বলেন, দিঘলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনগুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালটি জরাজীর্ণ হলেও চিকিৎসাসেবার কোন কমতি নেই। জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।