তথ্য প্রযুক্তি আইন

28

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই ধারার কারণে বহু সাংবাদিককে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। অনেককে কারাগারেও যেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে এই ধারার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো ফলোদয় হয়নি বলেই মনে করছেন নেতৃস্থানীয় সাংবাদিকরা। সোমবার ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’-এর যে খসড়াটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে, তার ৩২ ধারা এবং বাতিল হওয়া ৫৭ ধারার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই বলেই মনে করেন তাঁরা। তাঁদের মতে, ৫৭ ধারার মতোই এই ধারার কারণেও সাংবাদিকদের হয়রানির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং এর ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ব্যাহত হবে।
সভ্য দুনিয়ায় গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গণমাধ্যম রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের অসংগতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ইত্যাদির তথ্য তুলে ধরে জনগণের অর্থের অপচয় রোধ করে এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে। গণমাধ্যমের সেই কাজগুলো এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার গোপনীয় বা অতিগোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কেউ ধারণ করলে তা হবে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির শামিল। প্রথমবারের অপরাধে শাস্তি হবে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা। দ্বিতীয়বার কেউ একই অপরাধ করলে শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা। এ অপরাধে গ্রেপ্তার হলে জামিনও পাওয়া যাবে না। এসব সংস্থার প্রায় সব ফাইলেই গোপনীয় বা অতিগোপনীয় কথাটি লেখা থাকে। বিভিন্ন সূত্রে সেসব নথির কপি সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাইয়ের পর সাংবাদিকরা সাধারণত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করে থাকেন। এখন তাঁকে যদি গুপ্তচরবৃত্তির মতো কঠিন অপরাধের পর্যায়ভুক্ত করা হয় এবং এমন কঠোর দণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে কোনো সাংবাদিকই সেই ঝুঁকি নিতে রাজি হবেন না। তাতে লাভ হবে দুর্নীতিকারীদের। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও দেশের মানুষ। শুধু সাংবাদিক নয়, অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষও এই আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। খসড়া আইনে মোট ১৪টি ধারার অপরাধকে আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আদালতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই অনেককে বছরের পর বছর কারাগারে কাটাতে হতে পারে। তাই একে অনেকে মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করছেন।
প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে সংগতি রেখে স্বাধীন সাংবাদিকতাও এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। সে ক্ষেত্রে এমন কোনো আইন প্রণয়ন করা মোটেও কাম্য হবে না, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে কিংবা মানুষের বাক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে। আমরা মনে করি, সংসদে পাস হওয়ার আগে আইনটি আবার বিবেচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।