নিরাপদ পানির ব্যবস্থা জরুরী

47

ওয়াসার পানিতে মানুষের আস্থা নেই। তাই অফিসে তো বটেই, বাড়িতেও অনেকে নিরাপদ ভেবে জারের পানি পান করে। কিন্তু সেই পানি কি আসলেই নিরাপদ? গণমাধ্যমে আসা খবরাখবরে বরং ভিন্ন তথ্যই পাওয়া যায়। চাহিদা বাড়ায় ও লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন ‘বিশুদ্ধ পানি’র ব্যবসায় নেমে গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর অভিযানে এমন বহু প্রতিষ্ঠান ধরাও পড়েছে, যারা ওয়াসার পানি জারে ভরে বাজারে সরবরাহ করছে। গত রবিবার বিএসটিআই ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় থাকা এমন চারটি প্রতিষ্ঠান সিলগালার মাধ্যমে বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই কর্মচারীকে তিন মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে এই মারাত্মক ক্ষতিকর অসাধুতা বন্ধ হবে কি?
ঢাকা সহ সারাদেশে যত প্রতিষ্ঠান বর্তমানে জারে পানি সরবরাহ করে, তার অর্ধেকেরই কোনো লাইসেন্স নেই। যাদের লাইসেন্স আছে, তাদেরও অনেকেই মানসম্মত পানি সরবরাহ করে না। অনেক প্রতিষ্ঠানে জীবাণুমুক্ত করার মেশিন থাকলেও তারা উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভের অঙ্ক আরো বাড়াতে সেসব মেশিন ব্যবহার করে না। ফলে তাদের পানিও নিরাপদ হয় না। মনুষ্যবর্জ্যে থাকা কলিফর্ম জীবাণু প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় সেসব পানিতে। তাহলে অর্থ খরচ করে এসব পানি কিনে লাভ কী? আর রাস্তার পাশের বা ফুটপাতের দোকানগুলোতে থাকা ‘বিশুদ্ধ পানি’র তো কথাই নেই। অনেককেই দেখা গেছে, আগে দু-একটি পানির জার সংগ্রহ করে, তারপর ওয়াসার পানি দিয়ে সেই জার ভর্তি করে মানুষের কাছে বিক্রি করে। প্রতিদিন এ রকম পানি পান করে বহু মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।
ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, নানা রকমের পেটের পীড়া বাংলাদেশের খুব পরিচিত রোগ। এসবের প্রধান কারণ অনিরাপদ পানি। তাই বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষের যে আকুতি, তা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক) ঢাকায় জারের পানি নিয়ে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। তাতে জানা গেছে, এসব জারের প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ১৭ এবং সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০০ পর্যন্ত কলিফর্ম জীবাণু রয়েছে। এই পানি পান করলে অসুস্থ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি কে নিয়ন্ত্রণ করবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান এবং সামান্য কিছু অর্থদণ্ড এই ঝুঁকি কমাতে পারবে না। এর জন্য চাই কঠোর আইন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।