সৈয়দপুর আমার অহংকার

164

সৈয়দ হিলাল সাইফ

হাজার বছরের জনপদ
সে যে আমার প্রিয় গ্রাম,
মনের গহীন ভেতর জুড়ে
সৈয়দপুরের নাম।

শাহ জালালের সঙ্গী ছিলেন
৩৬০ আউলিয়া,
সারা সিলেট ছড়িয়ে পড়েন
দ্বীনের দাওয়াত নিয়া।

অন্যতম সঙ্গী যে তার
সৈয়দ শাহ শামসুদ্দীন (র.)
এই গ্রামেই গাড়লেন আসন
প্রচার করতে দ্বীন।

সে সময়ে নাম যে গ্রামের
ছিল কৃষ্ণপুর,
তার পরশে ধন্য সে গ্রাম
নামে সৈয়দপুর।

সৈয়দপুরের সবাই তো সে
ওলির আওলাদ নন,
সৈয়দ শেখ মির্জা কোরেশ
গোষ্ঠীবিশেষ হন।

আমার পূর্বপুরুষ সৈয়দ
উমর সমরকন্দী (র.),
উত্তরসূরী সৈয়দ ফুল (র.) তার
ছড়ান যে সুগন্ধী।

দেশ-বিদেশে রাজনীতিতে
ব্যস্ত স্বদেশপ্রেমিকজনে
সৈয়দপুরের নামটি তারা
নিয়ে গেছেন উচ্চাসনে।

৫২’ র ২১ শে ফেব্র“য়ারি
৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে
আয়ুব থেক স্বৈরাচার
বিরোধী সব আন্দোলনে।

মিছিল, মিটিং পিকেটিং-এ
এই গ্রামেরই দামাল ছেলে
থাকছে সবার অগ্রভাগে
প্রয়োজনে যাচ্ছে জেলে।

বিশ্বযুদ্ধের বীর সাহসী
এই গ্রামেরই সুসন্তান
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে
পাইযে খুঁজে তার সন্ধান।

এসপি, মেজর, কর্ণেল, জজ
উকিল-মোক্তার, ব্যরিস্টার
সচিব, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার
অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, মাস্টার।

আলীয়া, কলেজ, পাইলট, গার্লস
হাফিজিয়া, টাইটেল কওমি
প্রাইমারী, কিণ্ডার, বালিকা, নূরনী
এতো প্রতিষ্ঠান পাবেন কমই।

মসজিদ, মিনার, ক্লাব, পাঠাগার
চাইয়াডুবি, গোল, বড়দারা মাঠ
হাওর-বাওর, নদী-নালা, বিল
বাড়ির পাশের গোপাট।

পোষ্ট অফিস ব্যাংক মিল কারখানা
উন্নত দালান বাড়ি ঘর
আকাশ পানে বিমান উড়ে, শীতে
কিচিরমিচির পাখীর স্বর।

ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাদীক্ষা
খেলাধূলা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি
শিল্পকলার শাখা-প্রশাখায়
বেড়েছে প্রভাব-পরিচিতি।

ঢাবি, জাবি, চবি, শাবি
টেকনিকেল ও মেডিকেল
সময়মতোই এগিয়ে গেছে
ট্রেন ধরতে হয়নি ফেল।

স্বনামধন্য বিবিসি, স্কাই
জাতিসংঘ যায়নি বাদ
দেশ-বিদেশের ভার্সিটিতে
ভিপি-জিএস জিন্দাবাদ।

ষাট দশকে পূর্বপুরুষ
তের নদী সাত সাগর
সুখের আশায় পাড়ি দিয়ে
গ্রেট বৃটেনে বাঁধেন ঘর।

তার সুবাদে অর্থনৈতিক
জীবনযাপন স্বনির্ভর।

ধর্মেকর্মে রাজনীতিতে
থাকতে পারে মতভেদ
তারপরেও মতান্তরে
পড়েনি কোপ, হয়নি ছেদ।

এই পৃথিবীর প্রান্ত ঘুরে
কতো সুখের বাসস্থান
দেখছি কতো তারপরও এই
গ্রামের ছবি হয়নি ম্লান।

এই সে মাটির সাথে মিশে
আমরা আছি পরস্পর
প্রার্থনা তাই মিলেমিশে
থাকি যেন জীবন ভর।

হালিচারা মাঠ, বড়দারা মাঠ
আমার শৈশবকাল
ফুটবল খেলার অদম্য নেশা
এখনো রয়েছে বহাল।

বাড়ির উঠানে মার্বেল আর
খালি বাক্সের খেলা
চল…কুত কুত লুকোচুরি কতো
এমনি কেটেছে বেলা।

ঠেলাজাল নিয়ে হাঁটুজলে নামি
দড়া টেনে আনি মাছ
কাটাগাঙ পারে ছালিউরা বনে
কেটেছি কলমি গাছ।

সাপাতি হাওরে নেরা তুলে আনি
চেঙ্গা বিলে পলো বাওয়া
ভাইয়ের সাথে বায়না ধরেছি
ডাট্যায় সাথে যাওয়া।

বাড়ির কাছেই মাগুরা নদী
মায়ের মতোই টানে
সাঁতার কাটার দিনগুলো আজও
দোলা দিয়ে যায় প্রাণে।

বর্ষার জলে নৌকা ভাসিয়ে
স্কুলে যাওয়া আসা
মনে জাগে আজও সহপাঠীদের
জলে ভেজা ভালোবাসা।

গ্রামের সাথে আমার আছে
প্রবল নাড়ির টান
যত দূরে যাই খুঁজিয়া বেড়াই
প্রাণ করে আনচান।

কথায় আছে “সৈয়দপুরের
লয় হলো আলাজালা,
এক ভাইয়ের হয় মামাশ্বশুর
অপর ভাইয়ের শালা।

সৈয়দপুর আমার অহংকার
সাকিন সারিসুরি
ধন্য আমার জন্ম পরিচয়
আমি সৈয়দপুরী।

পিতা সৈয়দ হাবিবুর রহমান
মাতা জমিরুন নেসা
দুই ভাই তিন বোনের সংসার
ভালোবাসাই নেশা।

এই সে গ্রামের আলো ও ছায়ায়
হেসে খেলে বড় হই
তাইতো সে মায়া যায় নাতো ভোলা
যতই না দূরে রই।