দারিদ্র্যতার কারণ ও প্রতিকার

194

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
ঙ. বিবাহ করা: সাহাল তাস্তীরা, সুফ্ইয়ান ইবনে উয়াইনাহ্ প্রমুখের মতে বিবাহের সাথে বৈরাগ্য বা অবৈরাগ্যের কোন সংস্রব নেই। এর প্রমাণ রসূলুল্লাহ্ (স.) ছিলেন মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ‘যাহিদ’ এবং তিনি ছিলেন সমগ্র জগদ্বাসীর মহান শিক্ষক। তা সত্ত্বেও তিনি স্ত্রী গ্রহণ করা পছন্দ করতেন ও তাঁদেরকে খুব ভালবাসতেন। বিয়ের ফলে বংশ রক্ষা এবং আল্লাহ্র বান্দা ও নবী করীম (স.) এর উম্মত সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পথ প্রশস্ত ও মানুষ হিসেবে নিজেকে পবিত্র রাখা সম্ভব হয়। নবী করীম (স.) বিয়ের বহু ফযীলত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: ‘‘তোমরা প্রেমময়ী, অধিক সন্তানসম্ভবা নারীকে বিয়ে করবে। কারণ আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের উপর গর্ব করবো’’। ‘‘দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৭, এই গ্রন্থে হাদিসটি আবু দাউদ শরীফ, খ. ১, পৃ. ২৯৬।’’ তিনি আরো বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি পূত: পবিত্র অবস্থায় আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন স্বাধীন নারীর প্রণয়বদ্ধ হয়। ‘‘প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৮, এই গ্রন্থে হাদিসটি ইবনে মাজা, পৃ. ১৩৫ থেকে উদ্ধৃত’’। আমি নামাজ আদায় করি, ঘুমাই, রোজা রাখি আবার ইফতারও করি এবং নারীদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সে আমার দলভুক্ত নয়’’। ‘‘প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৯।’’ এ ছাড়াও রসূলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করেন: ‘‘যখন তুমি বিয়ে করলে তখন অর্ধেক দীন পূর্ণ করলে; এর অর্থ হলো, বিয়ে মানুষকে যৌনতা, ব্যভিচার, সমকাম থেকে ফিরিয়ে রাখে, যা এ পৃথিবীর অর্ধেক পাপ’’। ‘‘নায়েক, ডা. জাকির. লেকচার সমগ্র, ঢাকা: সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, ২০১০, পৃ. ৪২৪’’। অত:পর অবশিষ্ট অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহকে ভয় করে। ‘‘দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৯, এই গ্রন্থে হাদিসটি মিশকাত শরীফ, খ. ২. পৃ. ২৬৮ থেকে উদ্ধৃত’’। বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহ্রও তাগিদ আছে: ‘‘তোমাদের মধ্যে যাহারা ‘আয়্যিম’ তাহাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যাহারা সৎ তাদেরও’’। ‘‘আল-কুরআন, ২৪:৩২’’। আল্লাহ্ আরো বলেন: ‘‘আর তাঁহার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রহিয়াছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদের সংগিনীদিগকে যাহাতে তোমরা উহাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রহিয়াছে’’। আল-কুরআন, ৩০:২১’’। ইমাম গাযালী (র.) এর মতে, বিয়ে করলে যদি স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আল্লাহ্ তাআলাকে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে এমন ব্যক্তির পক্ষে বিয়ে না করাই ভাল। কিন্তু বিয়ে না করলে ঐ ব্যক্তির যদি ব্যভিচারে বা এ জাতীয় গুরুতর পাপে লিপ্ত হওয়ার ভয় আছে বলে মনে হয়, তবে এ পরিস্থিতিতে ‘যুহদ’-এর পরিচয় হল তার পক্ষে এমন অনাকর্ষনীয়া গুণবতী সক্ষম নারীকে বিয়ে করা যে তাকে দৈহিকভাবে পরিতৃপ্ত ও ব্যভিচার মুক্ত রেখে একাগ্র মনে আল্লাহ্র ইবাদতে সহায়তা করবে’’। ‘‘ইমাম গাযালী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, প্রাগুক্ত, খ. ৪ পৃ. ১৭৬’’।
চ. ঐশ্বর্য ও মান-সম্মান: ধনৈশ্বর্য ও মান-সম্মান, এ দু’টির লোভ সংসার জীবনে বিষের মতো ক্ষতিকর ও মারাত্মক; তবে এ দু’টি থেকে একান্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্রহণ করা বিষ অপহারক মহৌষধের মতো কাজ করে এবং ঐ পরিমাণ ধন ও মান সাংসারিক ভোগবিলাসের মধ্যে গণ্য হয় না। একান্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণ ধন ও মান আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে পারলৌকিক হিতকর বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য। তবে পুণ্যার্জনের লক্ষ্যে দান খয়রাতের সময় আল্লাহ্ নিজের নিতান্ত প্রয়োজনের দিকেও লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন: ‘‘তুমি তোমার হস্ত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তা হলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’’ ‘‘আল-কুরআন, ১৭:২৯’’।
আল্লাহ্ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদিগকে আল্লাহ্র স্মরণে উদাসীন না করে, যাহারা উদাসীন হইবে তাহারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৬৩:৯’’। নবী করীম (স.) বলেন: ‘‘যাহাকে আল্লাহ্ তাআলা দয়া করিয়া ইসলামের পথ দেখাইয়াছেন এবং অভাব মোচনের পরিমাণ ধন দান করিয়াছেন, আর সে ব্যক্তিও উহাতে পরিতৃপ্ত রহিয়াছে-এমন ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান’’। ‘‘ইমাম গাযালী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ১৬৪’’।
‘যুহদ’ প্রসঙ্গের সারার্থ: মানুষ পার্থিব জীবনের ভোগ-বিলাস ও লোভনীয় বিষয়াদির চিন্তা ও আকর্ষণ হতে নিজের মনকে মুক্ত করে নির্লিপ্ত ও নির্বিকার হওয়ার অভ্যাস করলে, পরিণামে সে এমন সৌভাগ্য লাভ করতে পারে যে, ইহলোক ত্যাগ করে পরলোক গমন কালে তার মন দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট থাকবে না এবং দুনিয়ার মায়ায় এর প্রতি বার বার ফিরে ফিরে তাকাবে না। যে ব্যক্তি দুনিয়াকে নিজ শান্তি ও আরাম-আয়েশের স্থায়ী আবাস মনে করে, সে ব্যক্তিই দুনিয়া ছেড়ে যাবার কালে দুনিয়ার প্রতি ফিরে ফিরে তাকায়। দেহের বন্ধনের কারণে দেহ সেখানে থেকে যেতে চায়, আর মৃত্যুকালে আক্ষেপ করে বলে- ‘জীবন এত ছোট কেনে’!
আবু সুলাইমান দারানী (র.) এর কাছে এক লোক জিজ্ঞেস করেছিল আল্লাহ্ তাআলা যে বলেন: ‘‘সেদিন উপকৃত হইবে কেবল সে, যে আল্লাহ্র নিকট আসিবে বিশুদ্ধ (সালীম) অন্তঃকরণ লইয়া’’। ‘‘আল-কুরআন, ২৬:৮৯’’। কেমন অন্ত:করণ বা হৃদয়কে ‘সালীম’ হৃদয় বলা যাইবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘যে হৃদয়ে আল্লাহ্ তাআলা ভিন্ন অন্য কোন পদার্থের স্থান নাই, সে হৃদয়কে ’সালীম’ ও সুস্থ হৃদয় বলা যাইবে।’’ ‘‘ইমাম গাযালী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ১৬৬’’।
এই যেখানে ‘যুহদ’-এর পার্থিব জগতের জীবন দর্শন সেখানে বলদর্পী পাশ্চাত্যের পার্থিব জগতের বস্তুগত সাফল্যের নিরিখে গড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের বস্তুগত-দর্শন সকল যুগের জন্যই নেহায়েতই বালখিল্য এবং অচল। বস্তুবাদী পাশ্চাত্যের প্রভাবে আজকের বাস্তবতায় হয়তো এ জীবন অকল্পনীয়, তবে এই হলো আদর্শ জীবন, যেমন অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাজারে আদর্শ অকল্পনীয় ‘পূর্ণ-প্রতিযোগিতা’-অবাস্তব হলেও যার আলোচনা আমরা করি। ‘যুহদ’ ব্যক্তিগণ দরিদ্র নন, তাঁদের অবস্থান দারিদ্র্য বিষয়ক আলোচনার ঊর্ধ্বে; কারণ যাঁর স্বভাবে মহত্ত্ব আছে দারিদ্র্য তাঁকে দরিদ্র করতে পারে না।
বস্তুগতভাবে দরিদ্র: ইসলামী পরিভাষায় বস্তুগতভাবে দরিদ্র সেই ব্যক্তি, যার নিজের নানাবিধ পার্থিব অভাব মোচনের মত অর্থ-সম্পদ নেই এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপার্জনের সামর্থ্যও নেই। তবে দারিদ্র্যের ব্যাপক অর্থ বুঝতে হলে, ধনী কে তা আগে বুঝতে হবে। ধনী তিনিই যাঁর কোন কিছুর অভাব নেই এবং যিনি কারো মুখাপেক্ষীও নন। এই অর্থে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ ধনী নন। মানব, দানব, ফেরেশ্তা, শয়তান বা আর যা কিছু সৃষ্টি জগতে বিদ্যমান, তাদের কারোই নিজ অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব তাদের নিজ ক্ষমতা বলে হয়নি এবং সে সব তাদের আয়ত্তেও নেই। তারা সবাই পরমুখাপেক্ষী এবং দরিদ্র। আল্লাহ্ বলেন- ‘‘আল্লাহ্ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত’’। ‘‘আল-কুরআন, ৪৭:৩৮।’’ ‘‘এবং তাঁহার সমতুল্য কেহই নাই’’। ‘‘আল-কুরআন, ১১২:৪’’। ‘‘তোমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, দয়াশীল। তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদিগকে অপসারিত করিতে এবং তোমাদের পরে যাহাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করিতে পারেন, যেমন তোমাদিগকে তিনি অন্য এক সম্প্রদায়ের বংশ হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন’’। ‘‘আল-কুরআন, ৬:১৩৩’’। আয়াতটিতে ‘গণীমত’ অর্থাৎ ধনীর ভাবার্থ এই বুঝানো হয়েছে যে, ‘‘যিনি ইচ্ছা করিলে পৃথিবীস্থ সমস্ত কিছুই ধ্বংস করিয়া দিয়া তদস্থলে যাহা ইচ্ছা তাহাই সৃজন করিতে পারেন। ইহাতে বুঝা যাইতেছে, একমাত্র আল্লাহ্ তাআলা ভিন্ন যাবতীয় সৃষ্ট পদার্থই ফকির’’ ‘‘ইমাম গাযালী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ১৩৪-১৩৫’’। অর্থাৎ দরিদ্র-পার্থিব ধন-সম্পদ যার যাই থাক না কেন। মানুষ পার্থিব জীবনে বহুবিধ অভাবের সম্মুখীন। ধন-সম্পদের অভাবও তাদের একটি। অন্যান্য যাবতীয় পদার্থের অভাব যেমন দারিদ্র, অর্থ-সম্পদের অভাবও তেমন দারিদ্র্য।
দু’কারণে মানুষ নির্ধন হয়: প্রথমত, কোন ব্যক্তি হয়তো স্বেচ্ছায় ধন ত্যাগ করে-এ প্রকার ব্যক্তি ‘যাহিদ’ এর পর্যায়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, কোন ব্যক্তির হয়তো ধন হাতে আসে না-এ প্রকার লোক ফকির বা দরিদ্র। বস্তুতঃ ধন-সম্পদে অভাবী লোকই দরিদ্র। এ প্রকার অভাবী লোক তিন শ্রেণীর হতে পারে: (১) ধন নেই, কিন্তু ধন উপার্জনের জন্য যারপর নাই তৎপর-এরা লোভী শ্রেণীর দরিদ্র। (২) যে দরিদ্র ব্যক্তি রিক্ত হস্ত হওয়া সত্ত্বেও ধন লাভের স্পৃহাকে সম্পূর্ণ দমন করে ফেলেছে, কেউ দান করলেও গ্রহণ করে না এবং ধন হাতে রাখাকে সর্বান্তকরণে ঘৃণা করে-এ ব্যক্তি ‘যাহিদ’। এঁদের বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। (৩) যে দরিদ্র ব্যক্তি ধন উপার্জনের জন্য চেষ্টা করে না, কিন্তু চেষ্টা বিনা ধন হাতে এলে তা ফেলে দেয় না, কেউ দান করলে গ্রহণ করে কিন্তু না দিলেও সন্তুষ্ট থাকে-এ ব্যক্তি আপন অবস্থার প্রতি সন্তুষ্ট দরিদ্র। শরীয়তের বিধান মতে সকল শ্রেণীর দরিদ্র লোকই দারিদ্র্যের সুফল ভোগ করবে, এমন কি লোভী দরিদ্র হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও যদি ধন লাভে বঞ্চিত হয়ে দরিদ্র থেকে যায় সে-ও দারিদ্র্যের সুফল ভোগ করবে। ‘‘প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৬।’’
দারিদ্র্যের ফযীলত: আল্লাহ্ বলেন: ‘‘এই সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরগণের জন্য’’। আল্লাহ্ তা’আলার কাছে ফকির বা দরিদ্রদের মর্যাদা এত উচ্চ যে, তিনি এই আয়াতে দরিদ্রদেরকে মুহাজিরদের অগ্রবর্তী করেছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি নিজের দরিদ্র অবস্থার প্রতি এতটাই সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত যে, কেউ কিছু দিলেও তা গ্রহণ করে না এবং ধন-সম্পদকে ঘৃণা করে, এ সব লোক ধনী লোকের পাঁচ শত বছর আগে বেহেশতে যাবে। আর যারা ধনোপার্জনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেও ধনী হতে পারেনি, এই শ্রেণীর লোভী দরিদ্রলোক সৎভাবে মৃত্যুবরণ করলে ধনী লোকের চল্লিশ বছর আগে বেহেশতে যাবে। ‘‘রসূলুল্লাহ্ স. বলেছেন: আমার প্রিয় দুইটি পেশা আছে, যে ব্যক্তি উক্ত পেশাদ্বয়কে ভালবাসে সে যেন আমাকেই ভালবাসে। আমার সেই পেশা দুইটির একটি দরিদ্রতা, অপরটি জিহাদ’’। ‘‘প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৬-১৩৭’’।
নবী করীম স.-কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ যা বলেন তার সারমর্ম এই: ‘‘হে মুহাম্মদ! আপনি দুনিয়া এবং দুনিয়াদারদের পার্থিব সৌন্দর্যের প্রতি নজর দেবেন না; এই পার্থিব সম্পদ তাদের বিপদের কারণ হবে। আল্লাহ্ তাআলার কাছে আপনার জন্য যা রক্ষিত আছে তা অতি উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী’’। ‘‘আল-কুরআন, ২০:১৩১’’।
নবী করীম (স.) বলেছেন: ‘‘আমাকে বেহেশ্ত দেখান হইয়াছিল। দেখিলাম-বেহেশ্তবাসীদের অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণীর লোক। দোযখও আমাকে দেখান হইয়াছিল। তথায় দেখিলাম, অধিকাংশ দোযখীই ধনী শ্রেণীর লোক। আমি বেহেশ্তে স্ত্রীলোকদের সংখ্যা খুব অল্প দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম: স্ত্রীলোকরা কোথায়? উত্তর আসিল: দুইটি রঙ্গিন পদার্থ অর্থাৎ স্বর্ণ এবং যাফরান তাহাদিগকে বেহেশ্ত হইতে বঞ্চিত রাখিয়াছে’’। ‘‘ইমাম গাযালী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৮’’। নবী করীম (স.) আরো বলেন: ‘‘আল্লাহ্ তাআলা যখন মানুষকে অতিমাত্রায় ভালবাসেন, তখন তাদের উপর নানাবিধ বিপদ-আপদ চাপাইয়া দেন। আর যাহাদিগকে পূর্ণমাত্রায় অত্যন্ত ভালবাসেন তাহাদিগকে ‘একতেনা’ করেন। সাহাবীগণ ‘একতেনা’ শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিয়াছিলেন: ‘কাহারও ধন-সম্পদ সমূলে বিনষ্ট করিয়া দেওয়া এবং পরিজনকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া ফেলাকে ‘একতেনা’ বলা হয়’’। ‘‘প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৯’’। (অসমাপ্ত)