সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধে পদক্ষেপ নিন

30

জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে গত দুই-আড়াই বছরে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে সরকার। সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার বেশ কিছু অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ কাজে পারদর্শিতা দেখিয়েছে। তাই বলে এ কথা বলার সময় এখনো হয়নি যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে জঙ্গিবাদমুক্ত হয়েছে। দেশের ভেতরের কোনো রাজনৈতিক শক্তি অথবা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ এখনো তাদের সক্রিয় করার মতো সামর্থ্য রাখে। বিশেষ করে সরকারি দলের আদর্শিক ক্ষীণদৃষ্টি বা ভোট জোগাড়ের নামে আপসকামিতা জঙ্গিবাদী শক্তির বিকাশের ক্ষেত্রকে এখনো উর্বর রেখেছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সক্রিয়তাও রয়েছে।
এ বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে; না হলেও প্রস্তুতি, প্রচার-প্রচারণার কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকবে। আগামী বছরের শুরুতে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ফলে রাজনৈতিক কারণেই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মাঠে নামানোর তৎপরতা চলবে। সম্প্রতি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছে। তাদের ধারণা, একটি মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধী ও জঙ্গিদের ব্যবহার করতে পারে। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা, অনেক দিন ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক দুর্বলতা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে বিরোধী জোট। নিজেদের বেশ সংহত মনে করছে তারা; এখন ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে। নির্বাচন উপলক্ষে টাকার খেলাও চলবে। এ খেলায় সন্ত্রাসী-অপরাধীদের নিয়ামক ভূমিকা থাকে। তাই তাদের দিয়ে অরাজকতা, নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা হতেই পারে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকেন্দ্রিক নাশকতার প্রায় পৌনে দুই হাজার মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনাও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। এই মামলাগুলোও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করার অজুহাত হয়ে উঠতে পারে। নাশকতার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকারকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধরপাকড় যে চলবে এ ঘটনায় সে ইঙ্গিত রয়েছে।
সরকার পুলিশকে হার্ডলাইনে যেতে বলেছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক কারবারি, ডাকাত, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের ধরতে বলা হয়েছে। সব পুলিশ সুপারকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হলে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতেই হবে। তবে সাধারণ মানুষের হয়রানি যাতে না হয়, গণহারে শুধুই রাজনৈতিক বিবেচনায় ধরপাকড় যেন না হয় সেদিক সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা বেচালে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টাকে প্রতিহত করার উদ্যোগে অরাজকতার আশঙ্কা আরো বাড়তে পারে। সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী এ সুযোগ হাতছাড়া করবে না।