যানজট রোধে রাস্তায় শৃঙ্খলা চাই

27

নগর-মহানগরের যানজট কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। যানজট কমানোর বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ তেমন কোনো কাজেই আসছে না। নিকট ভবিষ্যতে এই যানজট কমবে, এমন কোনো ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দ্রুত পরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়া হলে ২০৩৫ সাল নাগাদ যানজট বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। তখন কি মানুষের জীবনযাত্রা সচল থাকবে?
দেশে রাস্তা বাড়ছে না। অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা নগরীতে এমনভাবে ভবন তৈরি হয়েছে, যেখানে রাস্তা বাড়ানোর সুযোগও কম। ফলে যানজটে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে।
আবার অ্যাপভিত্তিক গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় গাড়িগুলোর ট্রিপ সংখ্যাও অনেক গুণে বেড়ে গেছে। অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি সংগ্রহে আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। বাইরে থেকেও প্রতিদিন অনেক গাড়ি বিভিন্ন নগরীতে প্রবেশ করছে। তাই অল্প কিছু উড়াল সড়ক বাড়লেও তা যানজট কমানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও বাড়ছে না গণপরিবহন। পুরনো লক্কড়ঝক্কড় বাসেই চলছে বেশির ভাগ মানুষের অতি কষ্টের চলাচল।
শৃঙ্খলাহীনতাও যানজটের একটি বড় কারণ। বাস-মিনিবাসগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়। প্রাইভেট কার, ট্রাক, ভ্যান ইত্যাদি যত্রতত্র রাস্তার ওপরে পার্কিং করে রাখা হয়। একই সড়কে ধীরগতির ও দ্রুতগতির যানবাহন চলায় পুরো রাস্তায় গতি কমে যায়। অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজের জন্যও রাস্তায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। ফুটপাতগুলো হকার ও দোকান মালিকদের দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। এতেও গাড়ি চলাচলের রাস্তা সংকুচিত হয়ে যায়। আর বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পারাপার যানবাহনের গতি কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর দুর্ঘটনাও ঘটায়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যায় না। পুরনো ও ফিটনেসহীন গাড়িও যত্রতত্র নষ্ট হয়ে যানজটের সৃষ্টি করে।
বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নয়, যানজটের দ্রুত বা আশু সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এখনই উদ্যোগ না নিলে পাঁচ-দশ বছর পরে যে অবস্থা হবে, তাতে সমাধানের কথা চিন্তা করাও হয়তো কঠিন হয়ে পড়বে। প্রয়োজনে নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি নামানোকে নিরুৎসাহী করতে হবে। বিশেষ লেন করে গণপরিবহনের চলাচল সহজ করতে হবে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।