এমপিওভুক্তির বিকল্প নেই

35

জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। পরবর্তী বাজেট যখন আসবে তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সরকার। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ বা এমপিওভুক্তির যে নীতিমালা রয়েছে তার ভিত্তিতেই তা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই কথা প্রণিধানযোগ্য। উল্লেখ্য, গত বেশ কিছুদিন থেকেই নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনে আছেন। ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে সরকার। এর পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বন্ধ আছে।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র জাতিকে প্রকৃত শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে তুলবে, এটাই প্রত্যাশা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সমৃদ্ধ করা ও সুশিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এমপিওভুক্তি একটি জরুরি প্রক্রিয়া। কিন্তু কারা এমপিওভুক্ত হতে পারবে তার একটি নীতিমালা আছে। আমাদের দেশে শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষক প্রয়োজন। সবাই সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ পাবেন না, এটা ঠিক। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত শিক্ষকদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মধ্যে আনতে হবে। তাঁদের গুণগত মানের উত্তরণ ঘটাতে পারলে শিক্ষার মান নিঃসন্দেহে উন্নত হবে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করতে হয়, বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন সবচেয়ে কম। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেশের বর্তমান বাজারমূল্যে একেবারেই নগণ্য। এমপিওভুক্ত করা হলে তাঁদের বেতন-ভাতা কিছুটা হলেও স্থিত হয়। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের বিকল্প কোনো আয়-রোজগারের চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু এমপিওভুক্তির জন্য যে নীতিমালা আছে, তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু এমপিওভুক্ত করা নয়, শিক্ষাকে মানসম্মত করার উদ্যোগ নেবে তাঁর সরকার। এই বিষয়টি হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। শিক্ষকদের মান উন্নত করতে না পারলে শিক্ষার মান উন্নত হবে না। শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যোগ্য শিক্ষকের পাশাপাশি প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষ। সারা দেশে ১৯ হাজার ৩৫৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে তিন হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গড়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের পেছনে তিন কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায়।
সরকারের সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা মেনে এখনই কাজ শুরু করা প্রয়োজন। শিক্ষার মানোন্নয়নে এমপিওভুক্তিই একমাত্র শর্ত নয়। আরো অনেক শর্ত পূরণ করতে হবে।