গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়ন

40

সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার রেডিও-টেলিভিশনে একযোগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণের শুরুতেই তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ায় সহযোগিতার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ভাষণে তিনি বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এটিও জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সেই নির্বাচন পরিচালনা করবে এবং নির্বাচনকালীন সরকার তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সুসংহত করবে। রাজনীতিসচেতন অনেকেই মনে করছেন, তাঁর এই বক্তব্য উদার ও গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।
২০১৪ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাববধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ফলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচন প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছিল। এতে সারা দেশে এক সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছিল। পরবর্তীকালেও সেই সংঘাত অব্যাহত ছিল। বিএনপি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক নামে না হলেও দলটির নেতারা কোনো না কোনো নামে নির্দলীয় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কথা বলে আসছেন। এসব দাবি সত্ত্বেও তাঁরা এখন পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদই ব্যক্ত করে আসছেন। সে কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা একটি শুভ সংবাদ বলেই মনে করছে অনেকে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। উদার মনোভাব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে উভয় পক্ষ যদি একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছতে পারে, তা হবে জাতির জন্য এক মহাপ্রাপ্তি। উভয় পক্ষকে মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষ কোনোক্রমেই কোনো ধরনের রাজনৈতিক অশান্তি দেখতে চায় না।
এটা সত্য, দেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। দরিদ্র দেশের কাতার থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ১০ বছরে মাথাপিছু জিডিপি তিন গুণ বেড়ে এক হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ তিন বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন চার গুণ বেড়েছে। আরো উৎপাদন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে ও হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে। দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এগুলো অবশ্যই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু এই উন্নয়নকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও চর্চা প্রয়োজন সেখানে আমাদের অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। তাই প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করা হয়। তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা যেকোনো সাফল্য ম্লান করে দেবে। তাই উন্নয়নকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার স্বার্থেই গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়ন প্রয়োজন। আগামী নির্বাচন যাতে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।