ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ॥ আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ধারা বিএনপি বজায় রাখেনি

77

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সারাদেশে উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে বলেছেন, সরকার যে কাজগুলো করেছে এবং ভবিষ্যতে যে কাজগুলো করতে যাচ্ছে তা সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দিতেই এই মেলার আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মেলায় আজকে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের বলব যে কাজগুলো আমরা করতে পেরেছি এবং যে কাজগুলো ভবিষ্যতে করার পরিকল্পনা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে যেমন জনগণকে সচেতন করা দরকার তেমনি আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচীগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তার জন্য সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে সেই লক্ষ্য নিয়েই এই উন্নয়ন মেলার সূচনা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারী বাসভবন থেকে সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে সব জেলা-উপজেলায় অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পীকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উন্নয়ন মেলা নিয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরগুনা, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, গাইবান্ধা ও চাঁদপুর জেলার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তার সরকার প্রতি গ্রামকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, আজকের বাংলাদেশ তার দেয়া ঘোষণা মোতাবেক ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপ পরিগ্রহ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে সব ধরনের সেবা পাচ্ছে। মোবাইল ফোন প্রত্যেকটি মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে। প্রায় ৮ কোটি জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের এই উন্নয়নই তার সরকারের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশবাসীকে এটুকু বলবো যে, উন্নয়ন মেলা যেটি তার সরকার করে যাচ্ছে, এই উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের উন্নয়ন। গ্রামের মানুষ, তৃণমূলের মানুষের উন্নয়ন। এই উন্নয়ন হচ্ছে বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্বের দরবারে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে।
তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব। যে স্বপ্ন একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন।
জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট বেশি দিলেও আসন কম পাওয়ায় দুর্ভাগ্যবশত ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর সাত বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মসূচীগুলো আর অব্যাহত রাখেনি। কারণ, সেগুলো নিয়ে তাদের মাথাব্যথা ছিল না বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো, দুর্নীতি, লুটপাট, মানিলন্ডারিং করা ও হাওয়া ভবন খুলে দেশে-বিদেশে ঘুষ দুর্নীতি করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। এভাবেই তার সরকারের উন্নয়ন অর্থনীতি পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর তারা দেখলেন তার আগের সরকারের মেয়াদে করা সব গণমুখী কাজই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ২০০৯ সালে আবার বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে সেসব নতুন করে শুরু করা হয়।
তার সরকারের লক্ষ্যই তৃণমূল মানুষের জীবনমান উন্নয়ন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে যদি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে হয় তবে, শুধু ধনিক শ্রেণীকে আরও ধনী বানানোর প্রয়োজন নেই। বরং যারা একেবারে তৃণমূলে পড়ে আছে, অবহেলিত রয়েছে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। গ্রামের জনগণের প্রাপ্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা দিতে হবে এবং গ্রামের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে হবে, অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে।
সিলেটে উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন : উন্নয়নের রোল মডেল, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ-এই শ্লোগানে সারাদেশের ন্যায় সিলেট রিকাবীবজারস্ত মোহাম্মাদ আলী জিমনেসিয়ামে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা ২০১৮। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়ন মেলা শনিবার শেষ হবে।
এর আগে সকাল ৯টায় সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বের হওয়া বর্ণাট্য র‌্যালী নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালী ও দ্বার উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ডা. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কামরুল আহসানসহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।
মেলায় সরকারি-বেরসকারি, স্বেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন উন্নয়ন দফতরের ৮২টি স্টল রয়েছে। স্টলগুলোতে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন ব্যানার, ফেষ্টুন, ডকুমেন্টারী দেখানো হচ্ছে এবং তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে ১৪টি স্টলে। এছাড়াও প্রতিদিন থাকছে রিয়েলিটি শো, আলোচনা সভা ও বিকেলে থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।