ধূলোর রাজ্যে পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি

106

কে. এম. লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
অপার সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা খ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা জাফলং ও বিছনাকান্দি। প্রকৃতি কন্যা নামে আদৃত এই পর্যটন কেন্দ্রের সবটুকু সীমানাজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। চির সবুজ আকাশ ছোঁয়া এ পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলছে অবিরাম ঝর্ণাধারা। ঝর্ণার স্বচ্ছ জলরাশি আর পাহাড়ী সৌন্দর্য্যর সাথে জুড়ে আছে উপজাতি খাসিয়া সম্প্রদায়ের কমলা বাগান, সারীবদ্ধ সুপারী গাছের গাঁ জড়িয়ে থাকা পান গাছ, পাতাল ভূমি থেকে ৫/৬ ফুট উঁচুতে নির্মিত খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসত ঘর, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলের অতলে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির পাথর এবং বিছনাকান্দি ও জাফলংয়ের মানুষের সহজাত বন্ধুতা এর সবকিছুই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। প্রকৃতির এ রূপ দেখতে তাই সব সময়ই বিছনাকান্দি ও জাফলং আসেন সৌন্দর্য্য প্রেমীরা। তাই এসব নৈস্বর্গিক সোন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে পর্যটন কেন্দ্র দু’টি। সরকারও এখান থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে থাকেন। এরপরও এই অপার স্যেন্দর্য্যরে যাতায়তের রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পরিনত। ফলে পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে রাষ্ট্রের অনুদার ও আন্তরিক মনোভাবের পরিচয় বহন করে।
এদিকে জাফলংয়ের তামাবিল শুল্ক ষ্টেশন থেকে বল্লাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫ কিমি এবং পীরের বাজার থেকে বিছাকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৭ কিমি এলাকা জুড়ে যেন ধূলোর রাজ্য পরিণিত হয়েছে। যার দরুন এই সকল রাস্তা দিয়ে যাতায়তের ক্ষেত্রে পর্যটকসহ স্থানীয় এলাকবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সড়কে ধূলো বালির উৎস হিসেবে সরেজমিন পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকানিদ এলাকা পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, তামাবিল শুল্ক ষ্টেশনের আশপাশ এলাকায় মহাসড়কের পাশে অপরিকল্পিত ভাবে ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপন করে ভারত থেকে এলসির মাধ্যেমে আমদানিকৃত পাথর লোড-আনলোড করার সময় গুড়া বা ডাস্ট এর সৃষ্টি হয়। আবার ১নং আপ ও বিজিপি ক্যাম্প রোড এলাকায় সড়কের দুপাশে স্থাপিত ক্রাশার মেশিন গুলো থেকে পাথর ভাঙ্গার সময় ডাস্ট উড়ে এসে রাস্তায় পড়ছে। মামার বাজার ও বল্লাঘাট এলাকাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। অপরদিকে পীরের বাজারÑবিছনাকান্দি রাস্তায় পাথর বাহী ট্রাক চলাচল ও ক্রাশার মেশিন স্থাপন করায় আশপাশের যায়গাগুলোতে ধূলোর মাত্রা ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে।
ধূলো-বালি সৃষ্টি রোধে ক্রাশার মেশিন গুলোতে পাথর ভাঙ্গার সময় পানি ব্যবহার করার কথা থাকলেও এ নিয়ম মানছে না কেউ। ফলে প্রতিনিয়তই এসব এলাকায় যাতায়াতকারী মানুষজন এবং ক্রাশার গুলোতে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা শ^াস কষ্ট, হাপানী, কাশি এবং সিলোকোসির মতো ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে স্বপরিবারে আগত পর্যটক রবিউল ইসলাম ক্ষোভের সাথে এ প্রতিবেদকে জানান জাফলং বেড়াতে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে আমরা মুগ্ধ ও বিমোহিত। খুব আগ্রহ নিয়ে জাফলংয়ে আসা। শ্রীপুর থেকে জাফলং পর্যন্ত আসতে অনেক ধূলো বালি খেতে হয়েছে। তবে ডিজিটাল সরকারের আমলে এখানে যে ধূলো বালির ছড়াছড়ি তা দেখে মনে খুবই কষ্ট পেয়েছি। ভেবে পাইনা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাফলংয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক আসলেও জাফলংয়ের রাস্তঘাট ও পরিবেশের দিকে সরকারের কোন সুনজর নেই। বিছনান্দি থেকে বেড়াতে আসা জসিম উদ্দিন ও মরম আলী বলেন, বিছনাকান্দি রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আর পর্যটন কেন্দ্রে এরকম একটি রাস্তা দেখে আসলেই খুব খারাপ লাগছে। ফলে রাস্তাঘাট খারাপ থাকায় ধূলো বালির করুণ দশায় পড়ে মনে হয় অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পাথর ভাঙ্গার ডাস্ট বা ধূলোবালি নাক মুখ দিয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে প্রথমে শাস কষ্ট, কাশি, এলার্জি, সিলোকোসি এবং পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই যথা সম্ভব ধূলো বালি থেকে দূরে থাকতে হবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ^জিত কুমার পাল জানান, জাফলং ও বিছনাকান্দি হচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা। সেক্ষেত্রে এই এলাকায় আগত পর্যটকরা যাতে কোন রকম ভোগান্তিতে না পড়েন এ দিকটা বিবেচনা করতে হবে। সিলেটের জাফলং ও বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি পাথর কোয়ারী অবস্থিত। তাই ব্যবসায়ী ও আগত পর্যটকদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষ্যে রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডি’র হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এবং এই দু’টি এলাকার সংখ্য গরিষ্ট মানুষ যেহেতু পাথর কোয়ারীর সাথে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে তাই তাদেরও উচিত পাথর ভাঙ্গার ক্রাশার মেশিন গুলো মহাসড়ক সংলগ্ন জায়গায় স্থাপন না করে মহাসড়ক থেকে দূরবর্তী নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পরিকল্পিত জোন ঘোষণা করে সেখানে মিল স্থাপন করা।