শাল্লায় পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় বিলম্বিত বোরো চাষ

32

শাল্লা থেকে সংবাদদাতা :
শাল্লায় এ বছর বোরো চাষ ২ সপ্তাহ পিছিয়ে চারা রোপণ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এলাকার কৃষকরা। এর কারণ হিসেবে অনেকই বলছেন-ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
তারা আরো জানান, গত বছর বোরো ফসলের শতভাগ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এলাকার কৃষক ও শ্রমিকরা জীবিকানির্বাহের জন্য চলে গেছে ঢাকা, গাজীপুর, ভোলাগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যেকরণে উপজেলায় শ্রমিক সঙ্কট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার কৃষক আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, আমার প্রায় ২৪ একর বোরো জমি রয়েছে। এসব জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কাজের মানুষ পাচ্ছি না। কৃষি কাজে আগের মতো শ্রমিক এখন নেই বললেই চলে। আমাদের নিজেদেরই জমিতে কাজ করতে হচ্ছে।
কৃষক প্রণয় চন্দ্র দাশ বলেন, আমার ৩ একর বোরো জমি রয়েছে। শ্রমিক আর অর্থের অভাবে জমিগুলো এবছর চাষাবাদের আওতায় আনতে পারিনি। ফলে বর্গাচাষিদের দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমার মতো আরো বহু কৃষক এবছর বোরো জমি চাষ করতে পারেননি। অন্যদিকে হাওরের নিচু জমিগুলো এবছর চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে না বলেও তিনি মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে ধীরগতিতে। ফলে নিচু জমিগুলোতে পানি এবার থেকেই যাবে। উপজেলার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল হক চৌধুরী বকুল বলেন, বান্দিকোণাবন্দে আমার ৫ একর বোরো জমি রয়েছে। কৃষিকাজে শ্রমিকের ব্যাপক সঙ্কট রয়েছে। আমি অধিক পারিশ্রমিক দিয়ে চারা রোপন করছি।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এলাকার বেশকিছু জায়গায় নারী ও শিশুরা ক্ষেতে কৃষিকাজ করছে। তারা বলছে, তাদের জমি সময়মতো রোপন করার জন্যই তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজে নেমেছে। বসে নেই নারীরাও। তারা বলছেন আগামী ফসল ঘরে তোলার জন্য তারাও পুরুষদের সহযোগিতা করছেন।
উল্লেখ্য, জলারাশি বেষ্টিত আমাদের হাওর অঞ্চল শাল্লা উপজেলা। হাওরপাড়ের মানুষের জীবিকায়নের প্রধান উৎস হচ্ছে একমাত্র সোনালী বোরো ফসল উৎপাদন। এসব অঞ্চলে বছরে ৬মাস বোরো জমি থাকে পানির নিচে। যেকারণে বছরে মাত্র একটি ফসলই উৎপন্ন হয়। একটি কৃষক পরিবারকে সারা বছর সংসারের খরচ মেটাতে হয় তাদের কষ্টার্জিত একমাত্র বোরো উৎপাদিত ধান বিক্রির মাধ্যমে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ ব্রত সরকার বলেন, শাল্লায় ২৪হাজার ৬শ’ ১৫জন কৃষককে এবছর কৃষি সহায়তায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছুটা পিছিয়েছে। তবে তার মতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।