কমছে না হাওরের পানি, দুশ্চিন্তায় ৪০ হাজার কৃষক

59

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
কমছে না হাওরের পানি, দুশ্চিন্তায় তাহিরপুরের ৪০ হাজার কৃষক। গেল বছর এ সময়ে ধুম পড়েছে হাওরে হাওরে বোরো রোপণ। এবার কোন হাওরে এখনো চোখে পড়ছে না বোরো ধান রোপণ।
সুনামগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা তাহিরপুরের বিভিন্ন বোরো ফসলি হাওরে পানি এখনো কমছে না। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই পুরোদমে চলে বোরো ধান রোপণের মৌসুম কিন্তু চলতি বছর হাওরে পানি না কমায় ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এসেও কৃষক জমিতে ধান রোপণ করতে পারছেন না। জানুয়ারী মাসের প্রথম দিক থেকে শুরু হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না সহসাই।
হাওরে হাওরে পানি না কমার এ চিত্র দেখে হাওর পারের হাজার হাজার কৃষক বোরো ধান রোপণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। গেল বছর অসময়ে অকাল বন্যায় হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল হারিয়ে কৃষক অনেকটা সর্বশান্ত। চলতি বছর বোরো ধান রোপণ মৌসুমে হাওরে পানি না কমায় আবারো নতুন করে কৃষকদের মনে উৎকন্ঠা দেখা দিচ্ছে। কষ্ট করে বীজতলা তৈরী করলেও জমি রোপণ করতে পারেবনে কিনা সেটাও ভাবনায় রয়েছে কৃষকদের।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শনি, মাটিয়ান, আঙ্গারউলি, ফানা, কেচুরিয়া, মহালিয়া, শমসা হাওর সহ ছোট বড় ২৩টি বোরো ফসলি হাওর রয়েছে এ উপজেলায়। ২৩টি ছোট বড় হাওরে বোরো ফসলি জমি রয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর। ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৪০ হাজারে অধিক কৃষক বোরো ধান চাষাবাদ করেন।
গত বছর হাওরে ঠিকাদার, পিআইসি ও পাউবো কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে অসময়ে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় উপজেলার সবকটি বোরো ফসলি হাওরের ধান। চলতি বছর বোরো রোপণের উপযুক্ত মৌসুমে এখনো চাষাবদের জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় নতুন করে আবার দুশ্চিন্তায় পড়ছেন হাওরপারের কৃষক।
শনি হাওর পার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামের কৃষক কয়েছ মিয়া বলেন, পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শনির হাওরের অর্ধেক জমি রোপণ শেষ হয়ে যায়। এবার হাওরে পানি না কমায় কৃষক এখনো জমি রোপণ শুরু করতে পারছেন না।
মাটিয়ান হাওর পার রতনশ্রী গ্রামের কৃষক এনামুল কবির তিনি বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে হাওরের পানি না কমলে পরবর্তীতে আর জমি রোপণ করেও কোন লাভ হবেন।
সরজমিন শনিহাওর, মাটিয়ান হাওর, বলদা হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সব হাওরে একই অবস্থা। ধীর গতিতে কমছে হাওরের পানি। এভাবে ধীর গতিতে পানি কমলে হাওরের বোরো ধান রোপণ শেষ করতে অনেক দিন লেগে যাবে। যথা সময়ে জমি রোপণ না করতে পারলে অসময়ে জমি রোপন করে কোন লাভ নেই বলে এলাকার কৃষকদের অভিমত।
মাটিয়ান হাওরপার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল্বহাজ্ব আজর আলী বলেন, হাওরের পানি এখনো না কমায় কৃষকদের মনে নতুন করে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। জমি না করতে পারলে আগামী দিন কি খাবেন এ নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই বলেও তিনি জানান।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুছ ছালাম বলেন, হাওরের পানি কমছে না, কমলেও তা খুব ধীর গতিতে কমছে। চলতি বছর ১৫ দিন পিছিয়ে পরবে বোরো ধান রোপণ মৌসুম।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি বলেন, উপজেলার অভ্যন্তরে হাওরপারে যে গ্রামেই যাই সকল কৃষকদের বক্তব্য একটাই পানিতো কমছে না, না কমলে কেমনে কি করমু।