বড়লেখায় ২ সন্তানসহ প্রবাসীর স্ত্রী খুনের ঘটনা ॥ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, সন্দেহভাজন ৩ নারী কারাগারে

94

বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ২ শিশু সন্তানসহ কাতার প্রবাসীর স্ত্রী খুনের ঘটনায় ৯ জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটায় মামলা রুজু করেন নিহত গৃহবধূ মাজেদা বেগমের চাচাতো ভাই ইমরান আলী। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা ৩ নারীকে শুক্রবার পুলিশ এজাহার নামীয় আসামী হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে। এরা হচ্ছেন নিহত মাজেদা বেগমের সৎ শ্বাশুড়ি মনোয়ারা বেগম, চাচী শ্বাশুড়ি আলিফজান বিবি ও জা সামিয়া বেগম। এদিকে একটি বারের জন্যও প্রবাসী আকামত আলী নিহত স্ত্রী ও দুই সন্তানের খোঁজ খবর নেননি। পলাতক ৩ চাচা শ্বশুরকে পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে। এদের গ্রেফতার করলেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে বলে পুলিশ মনে করছে।
এদিকে ময়না তদন্ত শেষে প্রবাসীর স্ত্রী ও তার দু’সন্তানের লাশ বাবার বাড়ি কুলাউড়ায় সার্বজনিন কবরস্থানে পাশাপাশি ৩টি কবরে দাফন করা হয়। রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে পথচারিরাও কবরগুলো দেখে বিষয়টি জানতে উদগ্রিব। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির আশয়-বিষয় জানতে নিহত মাজেদার বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়িতে দূরদূরান্তের লোকজন ভিড় করছেন। তবে বাবার বাড়িতে লোকজন থাকলেও বড়লেখায় সুজানগরের ভোলারকান্দি গ্রামে স্বামীর বাড়ি জনশূন্য থাকায় আগন্তুকরা আসল ঘটনা না জেনেই তালা দেয়া ঘরদোয়ার দেখেই ফিরে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে নিহত গৃহবধূ মাজেদা বেগমের বাবার বাড়ি নাসিরপুর (উত্তর সাদিপুর) গ্রামে গেলে বাড়ির আঙিনায় নারী পুরুষের ভিড় দেখা যায়। বুধবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আসা আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন এবং আশপাশের লোকজন সত্যিকারের ঘটনা জানতে ছুটে যাচ্ছেন।
নিহত মাজেদা বেগমের ছোট বোন সানজিদা বেগম, চাচাতো ভাই ইমরান, ফুফুতো ভাই উসমান জানান, বিয়ের পর থেকে মাজেদার সংসারে অশান্তি লেগেই ছিলো। তারপরও সবকিছু সহ্য করে স্বামীর সংসার আকড়ে পড়ে ছিলেন দুটি সন্তানের মুখ পানে চেয়ে। কিন্তু দুটি সন্তানসহ কোন মা এভাবে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারে না। পরিকল্পিতভাবেই মাজেদা বেগমকে হত্যা করা হয়। কেননা মাজেদার মৃত্যুর পর তার শ^শুর বাড়ির কোন লোক মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত জানায়নি। এতে তাদের সন্দেহ পরিকল্পিতভাবে তিনজনকেই করা হয়েছে।
চাচাতো ভাই ইমরান, ফুফুতো ভাই উসমান আরও জানান, তারা মাজেদার বাড়িতে গিয়ে দেখেছে পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ নিচে নামানো আছে। কিন্তু নিহত মাজেদার শ^শুড় বাড়ির লোকজন ৩টি মানুষ কিভাবে মারা গেলো, তাও বলেনি। পুলিশ লাশের ময়না তদন্ত শেষে কুলাউড়া বড়লেখা সড়কের পুষাইনগর বাজারে লাশ হস্তান্তর করে। কিন্তু লাশ দাফনকালে কিংবা দাফনের পরেও নিহত মাজেদা বেগমের শ^শুর বাড়ির কোন লোক কিংবা কাতার থেকে তার স্বামী আকামত আলীও ফোন দিয়ে কোন খোঁজ খবর নেয়নি।
নিহত প্রবাসীর স্ত্রী মাজেদা বেগমের মা মারা গেছেন ৩ বছর আগে। বাবা সোহাগ মিয়া দুবাই প্রবাসী। পরিবারে সৎ মা আর ছোট বোন সানজিদা বেগম। মামা সেলু মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে নিহত মাজেদা বেগমের বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির কোন পুরুষ মানুষকে দেখতে পাননি। ৩ চাচা শ্বশুর, সৎ দেবর সবাই ছিলেন পলাতক। ফলে তাদের সন্দেহ আরও প্রকট হয়েছে। মূলত চাচা শ^শুর শরাফত আলী এই ঘটনার মূলহোতা। আগে মাজেদা বেগমের নামে তার স্বামী বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতো। কিন্তু চাচা শ^শুর শরাফত আলীর চক্রান্তের কারণে মাজেদা বেগমের কাছে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন আকামত আলী। তাছাড়া ছোট ছেলে ফারুক আহমদের জন্মের পর গত ৩ বছর থেকে দেশেও আসেননি আকামত আলী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) দেবদুলাল ধর জানান, আটক ৩ মহিলার নিকট থেকে পুলিশ অগংলগ্ন অনেক তথ্য পেয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এগুলো প্রকাশ করতে অপরাগতা জানিয়ে তিনি বলেন এজাহার নামীয় আসামী হিসেবে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করলেই ঘটনার জট খুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।