জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে

21

আরেকটি সুখবর। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসেই জনশক্তি রপ্তানিতে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এই ১১ মাসে কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে গেছে বাংলাদেশের ৯ লাখ ৩১ হাজার ৮৩২ জন শ্রমিক। ডিসেম্বর মাসের জনশক্তি রপ্তানি যোগ হলে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক গেছে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায়। এ দুটি দেশে শ্রমিক যাওয়ার পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, কাতার, ওমানেও আগের তুলনায় বেশি শ্রমিক গেছে। কিছু নতুন বাজারও সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আছে এমন কয়েকটি দেশে শ্রমিক যাওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমেছেও। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির এই গতি ধরে রাখতে হলে আরো কার্যকরভাবে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
জনসংখ্যাকে যদি জনসম্পদে রূপান্তর করা যায়, তাহলে শুধু জনসম্পদই একটি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশই এই সত্য প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছোট, জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও সীমিত। বেকারত্বের হার অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবেই জনশক্তি রপ্তানি আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু এখনো আমরা মূলত অদক্ষ শ্রমিকই রপ্তানি করি বেশি। অথচ বিশ্বে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা ক্রমেই কমে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপর কিছুটা জোর দেওয়া হয়েছে, তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে বিদেশে তাদের উপার্জন বাড়ে, দেশেও তারা অনেক বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠাতে পারে। জনশক্তি রপ্তানির সুযোগও বাড়ে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় অনেক বেড়েছে। প্রথম পাঁচ মাসে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৭ শতাংশ বেশি। আর শুধু নভেম্বর মাসে গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ২৮ শতাংশেরও বেশি। আমরা যত বেশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করতে সক্ষম হব, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ তত বেশি হবে।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় তেলনির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। আমাদের জনশক্তি রপ্তানি মূলত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের শ্রমবাজারে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপেও জনশক্তির চাহিদা কমে গিয়েছিল। এ রকম পরিস্থিতি যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে হতে পারে। তাই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও আমাদের শ্রমবাজার যেন একটি টেকসই অবস্থান ধরে রাখতে পারে, সে জন্য নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।