হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের সেই ‘গরু দিয়ে ধান মাড়াই’

157

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
মেশিন মলিকরা বাড়ি বাড়ি এসে ধান মাড়াই করেন। কম খরচ আর কম সময়ে ধান মাড়াই করা যায় বলেই প্রায় ৩ একর জমির আমন ধান মাড়াই করছি। শুধু আমি না, আমার গ্রামের শতাধিক কৃষকরা কাটা ধান মাড়াই করছেন মেশিন দ্বারা। কথাগুলো বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের মুফতির গাঁও গ্রামের তালুকদার মো: ফয়জুল ইসলামের। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে বিশ্বনাথসহ বৃহত্তর সিলেটে গরু আর লাঙ্গল টানা সেই জরার্জীণ কৃষককে এখন আর দেখা যায় না। হালের গরু ছেড়ে ফয়জুল ইসলামের মতো শহ¯্রাধিক কৃষক এখন সাহায্য নিচ্ছেন অত্যাধুনিক ট্রাক্টর কিংবা মাড়াই যন্ত্রের।
ট্রাক্টরের সাহায্যে যেমন মাত্র ২০মিনিটে জমি প্রস্তুত করছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা তেমনি মাত্র ২০মিনিটেই যান্ত্রিক পদ্ধতির মেশিন দ্বারা এক একর জমির ধানও মাড়াই করছেন তারা। এখন আর কৃষকদের রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে ধানের বীজ শষ্যক্ষেতে ছিটিয়ে দিতে হয়না। কারণ জমিতে বীজ ছিটিয়ে দেয়ার জন্যও রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রাপাতি। শুধু কি তাই ? পাম্পের সাহায্যে সেচ কাজ পরিচালনা করে পানির চাহিদাও মিটোনো হচ্ছে দ্রুত। তাছাড়া নিত্যনতুন সব কিটনাশক আসছে বাজারে। আর ধানের পাতা পরীক্ষা করে জমির উপযোগী সেই কিটনাশক ব্যবহার কারা হচ্ছে ক্ষেতে। এমনকি ধানের আগাছা পরিষ্কার করার জন্যেও ব্যবহার করা হচ্ছে এক ধরনের দাঁতালো যন্ত্র। এ যন্ত্র দিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটেই আগাছা পরিষ্কার করা সম্ভব। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধান বপন, রোপণ, ধান কাটা, মাড়াই করাসহ প্রত্যেকটি কাজই সম্পন্ন হচ্ছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার দ্বারা। প্রযুক্তির সাথে হার মেনে বিলুপ্তির পথে কৃষকের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের সেই প্রাচীনতম মাধ্যম। অথচ, ৭-৮ বছর আগেও বিশ্বনাথসহ সিলেট অঞ্চলে দেখা যেতো গরু দিয়ে ধান মাড়াই করার অপরূপ দৃশ্য।
উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র দু’চারটি পরিবার ছাড়া প্রায় সকল কৃষকরাই যান্ত্রিক পদ্দতিতে ধান মাড়াই করছেন। বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের পূর্ব জানাইয়া গ্রামের ফখরুল ইসলাম, রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হরমুজ আলী ও আব্দুল মন্নান, দেওকলস ইউনিয়নের আলাপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান মিনু, দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বিলাল আলী, এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় ৫/৬ বছর আগে তারাও গুর দিয়ে ধান মাড়াই করেছেন। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় সহজে কাজ সম্পাদন করতে তারাও এখন যান্ত্রিক পদ্দতিতে চাষাবাদ করছেন।
খাজাঞ্চি ইউনিয়নের দ্বিপবন্দ (বিলপার) গ্রামের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট এএইচএম ফিরোজ আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, মাত্র ক’বছর আগেও প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলতো গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ। পাশাপাশি পূঁথিপাঠ, কিচ্ছা, ক্ষির, সন্দেশ, রুটপিঠাসহ নানা ধরনের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হতো। কিন্তু সেই সংস্কৃতি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এখন কেবলই স্মৃতি।
বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলীনুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ায় কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যে কারণে চলতি বছর এ উপজেলায় ১৩হাজার ২৮৫হেক্টর জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিক ফসল উৎপাদনের জন্যে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধান চাষাবাদের জন্য কৃষকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।