গোলাপগঞ্জে ৩ জুয়াড়িকে আটকের পর ১৫ দিনের সাজা

58

সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
ভারত থেকে আবিষ্কৃত শিলং তীরে মজেছে গোলাপগঞ্জ। এবার গোলাপগঞ্জে পুলিশের হাতে আটক হওয়া ৩ জুয়াড়ির ১৫দিন করে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এসব জুয়াড়িরা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক হলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বিরিয়ে আসে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে এ খেলাটি আবিষ্কৃত। শিলংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খেলা হচ্ছে ‘তীর খেলা’। অনেক ভারতীয়রা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এ খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। এখন এ খেলা শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ নয়। সীমান্ত পেরিয়ে এ খেলা এখন গোলাপগঞ্জ ও অনুষ্ঠিত হয়। এ ‘তীর খেলায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছে। গোলাপগঞ্জের যেকোন এলাকায় বসেই তারা শিলং জুয়ায় বাজি ধরছে। এ খেলাটি সপ্তাহের ছয়দিনই বসছে। প্রতিদিন দুইবার এ খেলার ড্র অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গোলাপগঞ্জে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে এদেশীয় এজেন্টরা ভারতের এজেন্টের সাথে জুয়ার আসরের সমন¦য় করে থাকে। আর ভারতীয় এ ভাগ্যের খেলায় স্কুল কলেজের ছাত্র, শিক্ষক, দিনমজুর, রিক্সাচালক, যানবাহনের চালক-শ্রমিকসহ বেকার যুবকরা অংশ নিচ্ছে। আর এতে করে অনেক স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এ খেলায় অংশ নিচ্ছে এতে করে শিক্ষার্থীদের মনযোগ বইয়ের পরিবর্তে তীর খেলার দিকেই বেশী মজেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই খেলা চললেও এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে ভারতীয় ধনকুবেররা এ রকম খেলাটি আবিষ্কার করে। এর নাম রাখে মেঘালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘তীর খেলা’। স্থানীয় ভাবে খেলাটিকে অনেকেই শিলং, ডিজিটাল খেলা, টুকা খেলা, নাম্বার খেলা, বোটকা খেলা, ভাগ্যের খেলা, ডিজিটাল নাম্বর খেলা ইত্যাদি নামে অবহিত করে থাকেন। খেলাটি ধরণ হচ্ছে এ রকম যে এদেশের এজেন্টদের মাধ্যমে ১-৯৯ পর্যন্ত নাম্বার বিক্রয় করা হয় যে কোন মূল্যে। লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা কিনে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। যত মূল্যে সংখ্যাটি বিক্রয় হবে তার ৭০ গুণ লাভ দেয়া হবে বিজয়ী নম্বরকে। অথাৎ ১০ টাকায় ৭০০ টাকা। একই নম্বর একাধিক লোকও কিনতে পারেন। সবাই কেনা দামের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি টাকা পাবেন। প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দুবার এ লটারির ড্র অনুষ্টিত হয়ে থাকে। ড্রর ফলাফল দেওয়া হয় অনলাইনে। ভারতের শিলং থেকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করা হয়। আর এ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ফলাফল জানাও যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর বাজার, বাজার চৌমুহনীর আশপাশ মার্কেটগুলো, গডাউন রোড, ইংলিশ রোড, বৈটিকর বাজার, উপজেলার নারাপিং বাজার, ১ মাইল বাজার, ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ্বর, হেতিমগঞ্জ বাজারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক স্পটে ভারতীয় এ জুয়ার আসর বসে থাকে। আর এসব জুয়ার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রভাবশালী দলের নেতাকর্মীরাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ শতাধিক ব্যক্তিরা জানান- নাম্বার বইয়ের মালিকরা নিরাপদে বসে খেলার নাম্বার টুকন বিক্রয় করছেন। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উৎকোচের বিনিময়ে এলাকার প্রকাশ্যে তীর খেলার দোকান স্থাপন ও টোকেন বিক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। গত শনিবার গোলাপগঞ্জে অবৈধ তীর খেলার অভিযোগে তিন জুয়াড়িকে আটক করেছে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ঐ জুয়াড়িদের সাজা দেন ভ্রাম্যমান আদালত। শনিবার রাতে উপজেলার পৌর এলাকার কদমতলী গোডাউন রোড থেকে ঘোষগাঁও (খালপার) গ্রামের সাতির আলীর পুত্র বাবলু মিয়া (২৩), সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভপুর থানার ইসলামপুর গ্রামের আব্দুল হাই এর পুত্র সোহেল আহমদ (২৩) ও একই গ্রামের কাছম আলীর পুত্র হাবিবুর রহমান হাবিব (২৬)কে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর গতকাল রবিবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জুয়াড়িদের ১৫দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম তার নিজ কার্যালয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শীর্ষ এ জুয়াড়িদের সাজা দেন। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি শিবলী বলেন, এসব জুয়াড়িদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে জন সচেতনতা প্রয়োজন।