আহত প্রেম

71

॥ আবু মালিহা ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
একদিন শিশির ছুটির সময় তার মাকে বলল, মা চল খালার বাড়ী থেকে ঘুরে আসি। মা খুব আদর করে বললেন, অবশ্যই… তবে তোমার স্কুলের রেজাল্টের পর। এতে তোমার ভালো রেজাল্ট নিয়ে খালার বাড়ি গেলে সবাই খুশি হবে। ছেলে অবশ্য গর রাজি হয়নি। মায়ের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিল। কারণ সুশীল ছেলের বৈশিষ্ট্যই এমন। কোন কথায় কারো অমত করে না, মা-বাবা তো নয়ই। তবু মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু আনমনা হলেন- যদিও ছেলে মুখের উপর ‘না’ বলে না। তবুও মায়ের মন বুঝে গেছে যে, ছেলে খুব খুশি হতে পারেনি। সে চেয়েছিল রেজাল্টের আগেই ঘুরে আসা। এতে তার অন্য একটি টান ছিল খালার বাড়ির দিকে। সেই ছোট্ট বেলা তার একজন খালাতো বোন ছিল ‘মনিরা’ সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে। তার চেয়ে তিন বছরের ছোট। দেখতে যেমন সুন্দরী তেমন চপলা। মিষ্টি হাসির চেহারাটি সব সময়ই ওর চোখে লেগে থাকতো…। এবার সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বেশ বড় হয়েছে এবং পড়াশুনা ভালো। ওকে দেখতে চায়, তাই তার মনটা হঠাৎ করেই খালার বাড়ির দিকে যেতে চাইলো। মনের ভাল লাগা বলে কথা! যাই হোক ছেলে মানুষের মন। মনের টান তো থাকতেই পারে। এমনি তে হঠাৎ করেই তার মনটা চঞ্চল হয়ে উঠছিল তাকে দেখার জন্য- আর তার জন্যই মায়ের কাছে আবদার ধরেছিল খালার বাড়ী যাওয়ার জন্য। যাক মাকে আর সে বিষয়ে সে কিছু বুঝতে দিলো না। আবার মা’কে বিরক্তও করলোনা সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
(২)
স্কুলের রেজাল্টের দিন ঘনিয়ে এলো। বার দিন এমনি করে চলে গেলো। অলস সময় পার করে দিলো একটু আধটু খেলাধূলা করে এবং প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় দিয়ে। তবে অবসর কাটতো তার নদীর ধারে বসে আকাশ গাঙের চিল উড়া দেখতে। নদীর কলতানে বয়ে যাওয়া এবং নদীতে পাল তোলা নৌকা বহুদূরে ছুটে চলে যাওয়া ইত্যাদি তার অন্তরের ভাবনা এবং ভাললাগা ছিল। দূরে কোন রাখালিয়ায় বটের ছায়ায় বসে বাঁশির সুর তাকে আরো উতলা করতো, গ্রামীণ পরিবেশের এমন মায়াবী ভালোবাসার চিরন্তন প্রকৃতির রূপ তাকে প্রায়ই আনমনা করে রাখতো। এ যেন তার প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম ভালবাসা। আর সেই ভালবাসার নীল গগনে যেন তার খালাতো বোনের নীল নয়নাকে প্রত্যক্ষ করতো। মনের অজান্তেই যেন তাকে উন্মনা করে দিতো তার সহজ সরল দৃষ্টির আনত নয়নে। এমন ভাল লাগার প্রশান্তিই যেন তাকে আবেগ তাড়িত করে ফেলে মনের পটে তাকে নিয়ে। অত:পর সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়লে বাড়ী ফেরে নিজের অশান্ত মনেকে শান্ত করে। ইতোমধ্যে বাবা গোয়ালে গরুগুলোকে খড়-বিচালি দিয়ে বেঁধে রেখে ছাতালে সব কিছু রেখে ঘরে ঢুকলেন।
ছেলেসহ দু’জনেই গ্রামের মসজিদে ছুটে গেলো জামাতে নামাজ পড়তে। কী এক অনাবিল প্রশান্তি। মহান রবের দরবারে আকুতি সেজদা দিয়ে কৃতজ্ঞতার ডালি বিছিয়ে দিলো জায়নামাজে।… কায়মনো বাক্যে প্রার্থনা-হে প্রভু… আমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করো। ভাল মানুষের সমাজ সৃষ্টি করে দাও। হেদায়েতের পথে পরিচালিত করো …. নামাজান্তে ঘরে ফিরল বাপ-বেটা। ক্ষণিক বিশ্রামের পর ছেলে পড়ার টেবিলে বসল ক্লাসের পড়া শেষ করতে। মা এসে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলল, ছেলে আমার অনেক বড় হবে। সমাজের একজন নামকরা মানুষ হবে। সবার ভাল করবে। সমাজকে সুন্দর করে গড়বে। এই বলে ছেলের মাথায় ফুঁ দিয়ে হেঁসেলে চলে গেলো মা তার কাজে। (অসমাপ্ত)