নবীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান ছুরিকাহত সহ সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৭০

50

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
নবীগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ বাজারে নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে বানিয়াচং উপজেলার বড়ইউরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৫) এর উপর ঈদের আগের দিন শুক্রবার সকালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাজী ইছাক ট্রেডার্স এর সামনে বসে থাকা অবস্থায় মদ্যপান অবস্থায় হলদারপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া ও কামাল মিয়া ছোরা দিয়ে চেয়ারম্যান হাবিবকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে পালিয়ে যায়। এর  প্রতিবাদে চেয়ারম্যান হাবিবের পক্ষের লোকজন ও প্রতিপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে ওই গ্রামের মৃত আবু মিয়ার ছেলে ইসলাম উদ্দিন (২৩) নিহত হয়।  এছাড়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আরো ২০জন আহত হয়।
খবর পেয়ে (বানিয়াচং-আজমেরীগঞ্জ) সার্কেল এ এস পি শৈলেন চাকমা, বানিয়াচং থানার ওসি মোজাম্মেল হক ও নবীগঞ্জ থানার এস আই সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে হলদারপুর গ্রামে পুরুষ শূন্যতা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক সিরাজ মিয়া ও খরছু মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বানিয়াচং উপজেলার বড়ইউরি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিবের সাথে হলদারপুর গ্রামের সিরাজ ও কামালের গংদের সাথে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে সিরাজ ও কামাল চেয়ারম্যান হাবিব ও তার পরিবারের লোকদের বিভিন্ন সময় হেনস্থা করে আসছে এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে শিবগঞ্জ বাজারে সিরাজ ও কামাল তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মদ্যপান অবস্থায় চেয়ারম্যান হাবিব ও তার বড় ভাইকে গালাগালি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটায়। এ সময় বাজারের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা চলে যায়। এর পর দিন শুক্রবার  সিরাজ ও কামাল ছুরি হাতে নিয়ে চেয়ারম্যান হাবিবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে বসে থাকা অবস্থায় এলোপাথাড়ি ভাবে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন হাবিবকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন দুপুর চেয়ারম্যান হাবিবের লোকজন ও প্রতিপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে উভয় পক্ষের ২০জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৪জনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে পথিমধ্যে ইসলাম উদ্দিন (২৩) মারা যায়। পরে তার মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূন্য রয়েছে হলদারপুর গ্রাম। যেকোনো সংঘর্ষ এড়াতে এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে  (বানিয়াচং-আজমেরীগঞ্জ) সার্কেল এএসপি শৈলেন চাকমা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে এখানে নির্বাচন নিয়ে এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ে বিরোধ ছিল এরই প্রেক্ষিতে শিবগঞ্জ বাজারে চেয়ারম্যান এর সাথে কথা কাটাকাটা হয় এরই জের ধরে সকালে শিবগঞ্জ বাজারে চেয়ারম্যান এর নিজের দোকানে একা পেয়ে প্রতিপক্ষের চার ৫ জন লোক অতর্কিত  হামলা চালায়। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন ও অপর গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে একজন নিহত। এ ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের চানপুর, ও বাউসা বাজারে সিএনজি (অটো রিক্সা) স্ট্যান্ড এ যাত্রী উঠানামাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মহিলাসহ আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক লোকজন। এর মধ্যে ৪জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে অপর আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঈদের পরদিন গত রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার চানপুর সিএনজি স্ট্যান্ড এ যাত্রী উঠানামাকে কেন্দ্র করে ভরপুর গ্রামের  সিএনজি চালক মানিক মিয়া, তার ভাই সিএনজি চালক মুক্তার মিয়ার সাথে একই উপজেলার কুর্শি গ্রামের যাত্রী কামাল উল্লাহ’র সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে চালকরা কামাল ও তার যুবতী মেয়েসহ তাদেরকে বেধড়ক ভাবে মারধর করলে ধুলচাতল গ্রামের সায়েদ আলী, কামাল মিয়া এর প্রতিবাদ করেন। এতে হামলাকারীরা তাদের উপর চড়াও হলে ধুলচাতল ও ভরপুর গ্রামের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট পাটকেল নিক্ষেপ এর ফলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের লোকজন, এলাকার পথচারী, বিশিষ্ট মুরব্বি মাহতাব উদ্দিন সহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন।
আহতদের মধ্যে ৪ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছে অপর আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলেন মাহমুদ মিয়া (৩২), মনি বেগম (৬০), সাদ্দক উল্লাহ (৮০), জবা বেগম (২১), সাদক আলী (৩০), ইসমত মিয়া (২৮), জুবেদ মিয়া (২৮), মদন কর (২৩), মানিক মিয়া (১৮), আবুল বাশার (৩৫), আলমাছ মিয়া (৫০), জুনেদ মিয়া (৩০), কামাল উল্লাহ (৫০)।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে।