ঈদের আনন্দ নেই জামালগঞ্জে হাওর পারে

44

নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
ধান নিল পাইন্যে, ঘরও নিল পাইন্যে। খাওনের অভাবে গরু বেছলাম ফস্তায়। কুরবানি ত দূরের কথা খাওনের কোন ব্যবস্থা নাই। অভাবের তাড়নায় বড় পোলাডারে আর পড়াইতে পারলাম না, হাটে এক চায়ের দোকানে চাকরীতে দিছি। একান্ত আরাপ চারিতায় চোখের কোনায় জমানো পানি নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের হডামারা গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুর রহিম। ফসল হারা এই কৃষক নিজের স্ত্রী সহ ৪ ছেলে মেয়ে নিয়ে আনন্দে নয়, নিরবেই পালন করবেন পবিত্র ঈদুল আযহা। কষ্টে মাখা দীর্ঘশ^াস ছেড়ে বলেন, গেল ঈদে পরিবারের কাউকে নতুন জামাতো দূরের কথা কোন এক সামাজিক সংগঠনের দেওয়া কিছু ত্রাণেই পালন করছিলাম রোজার ঈদ। সব ছোট মেয়েটা নতুন জামা পড়বে বলে গত ঈদের মত এবারও বায়না ধরেছে। শুধু আব্দুর রহিমই নয় এভাবে ফসল হারিয়ে জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর, পাকনার হাওর পারের শত শত কৃষক পরিবার আজ দিশে হারা সর্বহারা। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদে নতুন জামা কেনা, কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা প্রতিনিয়ত খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে পানির দামে গরু বিক্রয় করে এতদিন কোন রকম দিনযাপন করছেন। কুরবানি তাদের কাছে স্বপ্নের মত। এমন কি স্বচ্ছল পরিবারের কৃষকেরা  কুরবানি দিতে না পারায় হতদরিদ্র পরিবারের লোকেরা এবার পেট ভরে কুরবানির মাংস খেতে পারবে না।
উপজেলার হালির হাওর পারের আসানপুর গ্রামের স্বচ্ছল কৃষক পরিবারের সন্তান পুত্র এনামুল হক মনি জানান, প্রতিবছরেই পবিত্র ঈদুল আযহা পালনের জন্য আমরা হাওর পারের কৃষকেরা বৈশাখে ফসল তুলা শেষ করে নিজের গোয়ালে থেকে বাচাই করে কুরবানির জন্য ১-২ বা তার অধিক গরুকে আলাদা ভাবে পরিচর্যা করতাম ও আর কয়েকটা কুরবানি হাটে ভাল দামে বিক্রয় করার পরিচর্যা করতাম। কিন্তু এবার কয়েকটাতো দূরের কথা ভাল অবস্তাসম্পন্ন পরিবারের লোকেরা কুরবানি দিতে পারতেছে না।
পাকনার হাওর পারের চাটনী পাড়া গ্রামের  হত দরিদ্র কৃষক শুকুর আলী বলেন, প্রতিবছর আমার গ্রামে প্রায় ১৫-২০ কুরবানি হত ফলে আমরা যারা কুরবানি দেওয়ার সাধ্য নাই বা মাংস কিনে খাওয়ার তৌফিক নাই কুরবানি আইলে যথেষ্ট পরিমাণ খাইতে পারতাম কিন্তু এবার পাড়ায় কোন কুরবানি নাই। উপজেলা কৃষি সম্পসারণ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরেই প্রায় ১৫-১৬ হাজার গবাদিপশু কুরবানি হত কিন্তু এবার কৃষকদের ফসল অকালে তলিয়ে যাওয়া প্রায় কুরবানির সংখ্যা একতৃতীয়াংশ কমে গেছে।
খাদ্য সংকট নিরসনে সরকারি বেসরকারি ত্রাণ ও বিভিন্ন সহযোগতিার কথা জানতে চাইলে জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের কামিনীপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন ত্রাণে কি আর প্রাণ বাঁচে, আমরা চাই কর্মসংস্থান, তাছাড়া ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলেন।