ঈদের আমেজ নেই গোলাপগঞ্জের বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে

47

গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
ঈদের আমেজ নেই গোলাপগঞ্জ উপজেলার বন্যাদুর্গত গ্রামগুলোর মানুষের মাঝে। আর মাত্র ক’দিন পর পবিত্র ঈদুল আযহা। আর ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতা ও বিক্রেতারা তাদের পছন্দের পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। আর বন্যা দুর্গত এলাকার লোকজন একটু বেঁচে থাকার জন্য জীবনের সাথে সংগ্রাম করছে। কারও বাড়ী নেই। কারো ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়া দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আবার কারও সবকিছু নিয়ে গেছে বন্যার পানি। এ অবস্থায় ঈদুল আযহার আমেজ নেই বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের মাঝে। বন্যা দুর্গত এলাকার অনেক গ্রামে পশু কোরবানি হচ্ছে না। এবারের বন্যার স্রোতে অনেকের ধান, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেসে গেছে। বাড়ীঘর ঠিকঠাক আর প্রতিদিনের খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বন্যার্তরা। কেউ কেউ কোন রকম বাসের খুঁটি লাগিয়ে মাথাগোজার ঠাঁই নেয়ার চেষ্টা করছে। মধ্যভিত্তদের মধ্যে কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন বাসা বাড়ীসহ সিলেট শহরে। আর নি¤œ আয়ের লোকজন কোন উপায় না পেয়ে নিজের ভিটেমাটি রক্ষার জন্য জীবনের সাথে সংগ্রাম করছে। এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভার মধ্যে ৪টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামগুলোতে দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই। বন্যাদুর্গত ইউনিয়ন ও গ্রামগুলো হচ্ছে,উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউপির পানি’আগা, কদুপুর, বসন্তপুর, ইসলামপুর, কালীকৃষ্ণপুর, রাংজিওল, নূরজাহানপুর, ভাদেশ্বর ইউপির শেখপুর, মীরগঞ্জ, গাংলির হাওর, কদুপুর, মেহেরপুর, চকদৌলতপুর, পাতন, বাদেপাশা ইউপির আমকোনা, আছিরগঞ্জ, বাঘলা, পূর্ব বাঘলা, বুধবারীবাজার ইউপির কালীজুরি, ভহরগ্রাম, বাণীগ্রাম, বাঘিরঘাট, আমুড়া ইউপির ঘাগুয়া, সিলঘাট। শরিফগঞ্জ ইউপির বসন্তপুর গ্রামের প্রবাসী তাজ উদ্দিনের পুত্র গোলাপগঞ্জ এম.সি একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র পারভেজ আহমদ খাঁন বলেন, গ্রামের রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমরা গোলাপগঞ্জ বাজারের উত্তর বাজার রোডের পাশে একটি বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের রাস্তাঘাটে এখনও কমরপানি। আমাদের গ্রামের বাড়ীর লোকদের দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলই চলাচলের একমাত্র ভরষা ছিল। রাস্তাঘাটে পানি হওয়ায় মোটরসাইকেলও চলাচল করতে পারছে না। তবে কোরবানির পশু জবাই করার জন্য ঈদের দু’দিন আগে আমরা সপরিবারে বাড়ি যাবো। একই ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিরুজ্জামান বাবলু মিয়া বলেন, গোলাপগঞ্জ সদরে যেতে হলে মেহেরপুর গ্রামের লোকজন প্রায় অর্ধ্ব কিলোমিটার গলা’ইমা পানি পাড়ি দিয়া এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাইতে হয়। কারো কারো ঘরের দেয়াল দশে পানির সাথে মিশে গেছে। তাদের আবার ঈদের আনন্দ কিসের। তারা তিন বেলা দুমুটো ভাত খাওয়ার জন্য ও ভিটেমাটিতে থাকার জন্য জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে। গোলাপগঞ্জ পৌর সদরে যেতে সময় লাগে ৪/৫ ঘন্টা। পানি পাড়ি দেয়ার জন্য আলাদা জামাকাপড় সাথে নিয়ে বের হতে হয়। ভাদেশ্বর ইউপির শেখপুর গ্রামের মৃত আনা মিয়ার পুত্র নজরুল ইসলাম (৫৫)  বলেন, প্রতি বছরেই আমরা বন্যার পানির শিকার হই। তবে এবারের বন্যায় গ্রামের মানুষের ঈদের আনন্দটাও কেড়ে নিয়েছে। ঈদের আনন্দের বদলে বইছে কালো বিষাদের ছায়া। আমাদের আবার ঈদ কি? ঈদ তো বড় লোকের। বন্যার পানিতে গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার পর আমাদের গ্রামের টাকাওয়ালারা পাড়ি জমিয়েছে শহরের বাসা বাড়ীতে। এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের লোকের সাথে আলাপ করা হলে তারা একি দুঃখ দুর্দশার কথা বলেন।