শাহী ঈদগাহে গরুর হাটের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ ॥ লাক্কাতুরায় হাটের বেআইনী ইজারা ও মাঠ খালি করার দাবিতে চা শ্রমিকদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

36

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় পাশাপাশি দুটি গরুর হাটের আধিপত্য নিয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা  ৬টার দিকে DSC_0305দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। হামলায় উভয়পক্ষের ৫/৬জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সেখানে পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন- স্থানীয় মুরব্বী সাজ্জাদ মিয়া, জোনাক ও রশিদ। তবে বাকিদের নাম জানা যায়নি। যেটিতে বর্তমানে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল স্টেডিয়াম ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমি।
স্থানীয়রা জানান- শাহী ঈদগাহ এলাকায় পাশাপাশি দুটি হাট বসেছে। একটি সদর উপজেলা খেলার মাঠে, অন্যটি নজির কমপে¬ক্সের পিছনের লালমাটি এলাকায় প্রবাসী মঞ্জু জামান চৌধুরী নিয়ন্ত্রিত হাট। সম্প্রতি দুটি হাটের লোকজনের মধ্যে গরুবাহী ট্রাক নিজেদের হাটে প্রবেশ করানো নিয়ে উত্তেজনা চলছিলো। একপক্ষে মঞ্জু জামান, ডুম শাহেদ, কামাল রয়েছেন। অন্যপক্ষে জোনাক ও রশিদ নিয়ন্ত্রণ করছেন। উভয় পক্ষ প্রতিদিন কুমারপাড়া পয়েন্টে গিয়ে ট্রাক আটকিয়ে নিজেদের হাটে গরু নিয়ে যান। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় জোনাক এবং রশিদ একটি গরুবাহী ট্রাক হাটে নিয়ে আসার সময় শাহেদ-কামাল ও মঞ্জু তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে স্থানীয় মুরব্বী সাজ্জাদ মিয়া এগিয়ে আসলে শাহেদ ও কামাল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে তিনি আহত হন। এছাড়া জোনাক ও রশিদও আহত হন। কুমারপাড়া পয়েন্টে এ হামলার পর জোনাক-রশিদের লোকজন মঞ্জু নিয়ন্ত্রণাধীন হাটের সামনে গিয়ে সেখানে থাকা ওই পক্ষের লোকজনকে ধাওয়া করেন। শুরু হয় উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এতে বেশ ক’জন আহত হন। তাৎক্ষণিক অন্য আহতদের নাম জানা যায়নি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে শাহী ঈদগাহ লাল টিলার গরুর হাটের এনাম আহমদ বলেন- আমাদের গরুর হাটটি সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রকৃত নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। শাহী ঈদগাহ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে (সদর উপজেলা খেলার মাঠ) স্থাপিত গরুর হাটের লোকজন হঠাৎ এসে আমাদের গরুর হাটে হামলা চালায়। এতে আমি নিজে আহত হয়েছি। তারা হাটসংলগ্ন কয়েকটি বাসা-বাড়িতেও হামলা ভাংচুর করেছে।
অন্যদিকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের গরুর হাটের মধ্যে আমিনুর রহমান পাপ্পু বলেন- আমাদের পক্ষের কোন লোক হামলা করেনি। তাদের হাটটি অবৈধ। তারা আমাদের হাটের গরুর ট্রাক ছিনিয়ে নিতে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এতে আমাদের বেশকজন লোক আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে এয়ারপোর্ট থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানান- ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে প্রেরণ করি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।IMG_0261
এদিকে লাক্কাতুরা চা বাগান কর্তৃপক্ষের ভূমিতে সদর উপজেলা প্রশাসন বেআইনীভাবে কোরবানীর পশুর হাটের জন্য ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে সর্বস্তরের শ্রমিকরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছেন।  গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে লাক্কাতুরা বাজারে তারা এ মানববন্ধন পালন করে এবং কয়েক ঘন্টা ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে রাখে।
চা শ্রমিকরা বলেছেন, চা বাগানের এ মাঠ তাদের। এ মাঠে তাদের ছেলে-মেয়েরা খেলাধূলা করে থাকে। এছাড়া নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান তারা এই মাঠেই করে থাকেন। অথচ সদর উপজেলা প্রশাসন প্রতিবছর সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে এ মাঠ কোরবানীর হাটের জন্য ইজারা দিয়ে থাকেন আর হাট ইজারার সময় বলা হয়ে থাকে ইজারা থেকে প্রাপ্ত টাকার একটি অংশ চা বাগানের মাঠ, মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি টাকাও ব্যয় করা হয়নি। তাই বার বার প্রতারিত হয়ে আজ তারা মাঠে নেমেছেন। মানববন্ধনে চা শ্রমিকরা বলেছেন, অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে মাঠ খালি করে দেয়ার দাবী জানিয়েছে।
চা শ্রমিক নেতা রন বাহাদুর জোটে জানান, এ জায়গার খাজনা তারা দিয়ে আসছেন। প্রতিবছর কোরবানীর পশুর হাট এ মাঠে দেয়া হয়। আমাদের আশা দেয়া হয় চা শ্রমিকদের উন্নয়নে অনুদান দেয়া হবে। কিন্তু পরে হাট ইজারাদার কোন কথা রাখেননি। এবং তাদের কোন  কথা শুনেননি। এ পশুর হাট অবৈধ। তাই চা শ্রমিকরা একত্রে মিলিত হয়ে আমরা মানববন্ধন পালন করে কয়েক ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখি। পরে প্রশাসনের লোকজন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ চা শ্রমিকদের উন্নয়নের আশ্বাস দিলে আমরা অবরোধ তুলে নেই।