পাসের হারে মেয়েরা আর জিপিএ-৫ এ ছেলেরা এগিয়ে ॥ সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭২

42

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ২০১৭ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৭২ ভাগ। যা গতবারের H S C-pic- 23-07-17 (5)থেকে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গতবারে পাসের হার ছিলো ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গতবারের পাসের হাসের সূচক কিছুটা বাড়লেও এবার কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৭০০ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে ৪৫৫ ও মেয়ে ২৪৫ জন। এয়াড়া এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে সারাদেশের মধ্যে শীর্ষে আছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড।
যা গতবারের তুলনায় ৬৩০ টি কম। গতবার জিপিএ-৫ পায় ১ হাজার ৩৩০ জন পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬০৪ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ২৬ জন এবং ব্যবসা শিক্ষা থেকে ৭০ জন।
গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব মোস্তফা কামাল আহমদ। তিনি জানান, ইংরেজী ভীতির কারণে ফলাফলে পাসের হারের প্রভাব পড়েছে। একই সাথে পরীক্ষায় সময় আগাম বন্যা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনোবলে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, যার কারণে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও কমেছে। তবে সার্বিক ফলাফলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বোর্ডের অধিনে মোট ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪৬ হাজার ৭৯৭ জন। এদের মধ্যে ছেলে ২১ হাজার ৩০জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ২৫ হাজার ৭৬৭জন। শতভাগ পাসকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮টি। বিভাগ ভিত্তিক ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছে ৮ হাজার ৭৪৬ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ৭৪০ জন, মেয়ে ৪ হাজার ৬ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মানবিক বিভাগ থেকে ২৯ হাজার ৩৫৬ জন পাস করেছে। তাদের মধ্যে ছেলে ১১ হাজার ২০৮ জন, মেয়ে ১৮ হাজার ১৪৮ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ৮ হাজার ৬৯৫ জন পাস করেছেন।তাদের মধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৮২ জন, মেয়ে ৩ হাজার ৬১৩ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা, জিপিএ-৫ এ ছেলেরা: সিলেটে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে, কিন্তু কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এবার পাস করেছে ৭২ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় ৩ দশমিক ৪১ ভাগ বেশি। ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৫৯ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০০ জন। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৩০ জন। এবারের পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে আছে মেয়েরা আর জিপিএর সংখ্যায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। ছেলেদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর মেয়েদের পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অপরদিকে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছেলেদের সংখ্যা ৪৫৫ এবং মেয়েদের সংখ্যা ২৪৫ জন।
সিলেট বোর্ডে ফলাফলের বিশ্লেষণে দেখা গেছে: বরাবরের ন্যায় এবছরও সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এই বিভাগের ভালো ফলাফল অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার ফলাফলকে সামলে নিয়ে সিলেট বোর্ডকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করছে। গতকাল রবিবার প্রকাশিত এইচএসসি ফলাফলেরে মানবিকের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এই বিভাগের ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ফেল করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও মানবিকের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে পিছিয়ে। এই বিভাগের মাত্র ২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফলাফলে আরো দেখা গেছে, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০ হাজার ৪শ’৭৮জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ হাজার ৭শ’ ৪৬জন । পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪৭ ভাগ।
এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬শ’ ৪ জন, ‘এ’ গ্রেড ২ হাজার ৫শ’৮৭ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেড ২হাজার ৫শ’৬৫ জন, ‘বি’ গ্রেড ২হাজার ১শ’৫৫ জন, ‘সি’ গ্রেড ৮শ’৩৫ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে ‘ডি’ গ্রেডে কেউ উত্তীর্ণ হয়নি। এছাড়া ১হাজার ৭শ’৩২ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। মানবিক বিভাগ থেকে ৪৩হাজার ২শ’ ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৯ হাজার ৩শ’ ৫৬ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৮২ ভাগ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ জন, ‘এ’ গেডে ১ হাজার ৩শ’২৫ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেডে ৩হাজার ৭শ’৯ জন, ‘বি’ গ্রেডে ৭ হাজার ৭শ’৩৩ জন, ‘সি’ গেডে ১৫ হাজার ১শ’৯০ জন এবং ‘ডি’ গ্রেডে ১হাজার ৩শ’৭৩ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া ১৩ হাজার ৯শ’২৮ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১১ হাজার ২শ’ ৩৮ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ হাজার ৬শ’৯৫ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৩৭ ভাগ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ জন, ‘এ’ গ্রেডে ১ হাজার ১০ জন, ‘এ’ মাইনাস গ্রেডে ১ হাজার ৭শ’২২ জন, ‘বি’ গ্রেডে ২ হাজার ৪শ’৫৩ জন, ‘সি’ গ্রেডে ৩ হাজার ২শ’ ২৩ জন ও ‘ডি’ গ্রেডে ২শ’ ১৭জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৫শ’৪৩ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিজ্ঞানে ভালো ফলাফল কাঙ্খিত হলেও সেটি অন্য বিভাগকে খারাপ করে নয়। বরং যারা মানবিক কিংবা অন্য কোনো বিভাগ থেকে পড়াশোনা করছে তাদেরকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
পরীক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (যঃঃঢ়://িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ) থেকে ফল জানতে পারবেন। যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল জানতে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৭ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়।