গোলাপগঞ্জ হাওরপারগুলোতে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, কৃষকরা দিশেহারা

41

সেলিম হাসান কাওছার, গোলাপগঞ্জ থেকে :
প্রথম দফায় চৈত্রের আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল খাদ্য। আর এখন তলিয়ে গেছে বসত ঘর। ৩য় দফার 74199_31বন্যায় খাদ্য আর বাসস্থান হারিয়ে মানুষের মতো চরম অসহায় গবাদি পশুগুলোও। এবছর চরম গো খাদ্য সংকটে পড়েছেন হাওর পারের কৃষক। গেল ক’দিন থেকে এ সংকট তীব্র হচ্ছে। হাওর তীরের কৃষক গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বোরো ধান আর মাছ হারিয়ে যেমন তাদের নিজেদের খাদ্য নেই। তেমনি উপোস থাকছে তাদের গরু, মহিষ, ছাগল, আর হাঁস, মোরগও। তাই পোষা প্রাণীগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে। শরিফগঞ্জ, ভাদেশ্বর, বাদেপাশা, আমুড়া, বুধবারীবাজার ও বাঘা ইউনয়নে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের চরম সংকট। যার কারণে কৃষক বাধ্য হয়ে বিক্রির করছেন তাদের গৃহপালিত গরু, মহিষ ও ছাগল। তবে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সূত্রে জানা যায় চলমান বন্যায় এমন খাদ্য সংকটে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো বরাদ্দ। গো খাদ্য সংকট আর অভাবের তাড়নায় নিজেদের সংসার চালাতে এখন লোকসান দিয়েই বিক্রি করছেন গবাদী পশু। শেষ সম্বল এই গৃহপালিত পশুগুলো বিক্রি করে বন্যা পরবর্তী ক্ষেতের জমি চাষ নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। গতকাল সরজমিন শরিফগঞ্জ ইউপির ইসলামপুর, কালীকৃষ্ণপুর, পনাইরচক, কদুপুর, পানি’ আগা ও হাকালুকি হাওর, ভাদেশ্বর ইউপির মীরগঞ্জ ও শেখপুর আমুড়া ইউপির ঘাগুয়া ও শিকপুর, বুধবারীবাজার ইউপির বহরগ্রাম, বাগিঘাট, বাণীগ্রাম, কটলিপাড়া, বাদেপাশা ইউপির আছিরগঞ্জ, আমকোনা, টেওরকোনা ও বাগলা, বাঘা ইউনিয়নে রস্তমপুর, কালাকোনা, এখলাছপুর, ঢাকাদক্ষিণ ইউনয়নে শিলঘাট, সুনামপুর ও লামা চন্দরপুর  গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। প্রতিটি গ্রামে পানি বন্দী মানুষ ও গবাদি পশুর বসতঘর। শরিফগঞ্জ ইউপির ইসলামপুর গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৫) বলেন, তার ৯টি গরু নিয়ে পানির জন্য বন্দিদশায় ছিলেন। বন্যান পানির কারণে গো-খাদ্য সংকট দেখা দেয়ায় ৭টি গরু অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, গরুর দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তার পরিবারে বেশিরভাগ সময় অনাহারে কাটছে। আমুড়া ইউপির ঘাগুয়া গ্রামের রিজু মিয়া (৪৫) বলেন গোয়াল ঘরের চতুর্দিকে পানি থাকায় বাড়ি থেকে গরু বের করা যাচ্ছিল না। গোয়াল ঘরেও পানি। তাই কম টাকায় ৩টি ষাঁড় ও একটি গাভী বিক্রি করে দিয়েছি। ভাদেশ্বর ইউপির মীরগঞ্জ ও শেখপুর গ্রামের আতাউর রহমান ও মশাইদ আলীর সাথে আলাপ করা হলে তারা বলেন, তাদের খামারে বেশ কয়েকটি গরু ছিল। পানির জন্য গো-খাদ্য না থাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কয়েকটি ষাঁড় গরু পাঠিয়েছেন। তাদের টার্গেট কোরবানীর ঈদে তাদের গরু বিক্রি করা। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, টাকা-পয়সা নাই। নিজে খাইতে পারছি না আর গো-খাদ্য কিনব কিভাবে। ওদের আর না খাইয়ে রাখতে চাই না। তাই পোষা প্রাণীগুলোর এমন কষ্ট সহ্য হয় না তাই বিক্রি করে দিয়েছি। অন্য মালিকের ঘরে গিয়ে যাতে তারা শান্তিতে থাকে।