অশ্লীলতার বীভৎস রূপ এবং তার প্রতিকার

213

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
স্থাপত্য, চিত্র বা অন্য কোনো বর্ণনা যদি কোনো প্রাচীন স্মৃতিসৌধতে থাকে (এনশেন্ট মনুমেন্ট এন্ড অর্কিওলজিক্যাল সাইটস এন্ডস রিমেইন্স অ্যাক্ট. ১৯৫৮ অনুসারে) বা কোনো মন্দিরে থাকে অথবা এগুলো ধর্মীয় কারণে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে সেগুলির এই ধারার আওতায় পড়বে না। “ ১৮৬০ সালের ভারতীয় পেনাল কোডের ২৯২ ধারা”।
পেনাল কোডর ২৯৩ ধারায় বলা হয়েছে যে. যদি পূর্বোল্লিখিত অশ্লীল বস্তুু ২০ বছরের কম বয়সী কার নিকট বিক্রি করা হয়, ভাড়া দেয়া হয়, প্রদর্শন করা হয়, বা বিতরণ করা হয়, তাহলে শাস্তির পরিমাণ বেড়ে প্রথম অপরাধের জন্য কারাবাস ৩ বছর পর্যন্ত ও জরিমানার পরিমাণ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত হবে। দ্বিতীয় বা পরের অপরাধের জন্য ৭ বছর পর্যন্ত এবং জরিমানার পরিমাণ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হবে। উল্লেখ্য যে ১৯৬৯ সালের এক সংশোধনীতে শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছে। “১৮৬০ সালের ভারতীয় পেনাল কোডের ২৯৩ ধারা”।
ইন্টারনেটে প্রচারিত অশ্লীলতা রোধ করার জন্য ইনফর্মেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের ৬৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, ইলেকট্রনিক উপায়ে যদি কোনো বস্তু পাঠানো হয় যা ল্যাম্পট্যজনক বা যা কামপ্রবৃত্তিকে আকৃষ্ট করে, অথবা যার ফল, যদি সামগ্রিক ভাবে বিচার করা যায়, লোকের মনকে কলুষিত (ফবঢ়ৎধাব) ও নৈতিকভাবে অধঃপতি (পড়ৎৎঁঢ়ঃ)  করতে পারে সেটি হবে দন্ডনীয় অপরাধ। প্রথম অপরাধের জন্য ৫ বছর কারাবাস ও ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ; পর্রবতী অপরাধের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাস ও ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। “প্রাগুক্ত”। নারীর অশোভন উপস্থাপন (নিরোধ) আইনে নারীর অশালীন উপস্থাপনার অর্থ বলা হয়েছে নারীর শরীরকে- তার আকার, দেহ বা দেহাংশকে এমনভাবে দেখানো যেটি আশালীন, নারীর প্রতি অপমানসূচক বা নারীকে ছোট করা হচ্ছে। অথবা যা মানুষের নীতিবোধকে দূষিত, অধঃপতিত বা আহত করবে। “প্রাগুক্ত”।
এই আইনে বলা হয়েছে কোনো বিজ্ঞাপনে নারীদের আশালীন ভাবে দেখানো চলবে না। এখানে বিজ্ঞাপন বলতে ধরা হয়েছে যে কোন বিজ্ঞপ্তি, সার্কুলার, মোড়ক, বা অন্য কোন কাগজ পত্র। এগুলো আলো শব্দ ধোঁয়া বা গ্যাসের মাধ্যমে কোনো দর্শনযোগ্য উপস্থাপনও এই আওতায় পড়বে। “ প্রাগুক্ত”। এছাড়া কোন বই, পুস্তিকা, কাগজ, ফিল্ম, স্লাইড, লেখা, আঁকা, চিত্র, ফটোগ্রাফ, বা কোন আকৃতি যাতে নারীকে অশালীনভাবে ইপস্থাপন করা হচ্ছে তার প্রকাশনা করা, বিক্রি করা, বিতরণ করা চলবে না। তবে এ ব্যাপারে কতগুলো ব্যতিক্রম আছে। যেমন, এগুলো যদি বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প-চর্চা বা শিক্ষা-চর্চায় সহায়তা করে- তাহলে এতে অন্যায় হবে না। পেনাল কোডের ২৯২ ধারার মত এখানেও বলা হয়েছে যে, ধর্মীয় কারণে- মন্দিরে, পুরনো, মনুমেন্টের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। “ প্রাগুক্ত”।
অনলাইনে অসত্য ও অশ্লীল কিছু প্রকাশের ১৪ বছরের কারাদন্ড ঃ বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি আইনের অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধিত তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি আইনের লঘুপাপে গুরুদন্ডের শামিল বলে প্রমাণিত। অনলাইন অসত্য ও অশ্লীল কিছু প্রকাশের কারণে যদি ১৪ বছেরের কারাদন্ড হয়, তবে খুনের শাস্তি নকত বছর হবে, প্রশ্নও ওঠেছে। এ সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) আয়োজিত গোলটেবিলের বৈঠক বক্তারা এই মত দেন। আলোচনায় বক্তারা তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানান। এ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা ও অশ্লীল প্রকাশ করলে, যা দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট হতে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যের মানহানি ঘটায়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, ব্যক্তির ভাবমমূর্তি ক্ষুণœ করে বা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেয় তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারদন্ডে এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। আগের আইন কারাদন্ডের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ১০ বছর। গত ২০ আগস্ট অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ আইন সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো  হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি হামিদ হোসন বলেন, আইন করা হয় নাগরিকের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু এই আইনটি স্বাধীনতা হরণ করার জন্য। আইন বিশ্লেষক শাহদীন মালিক বলেন, আগামী বছর টিআইবি দুর্নীতির যে প্রতিবেদ প্রকাশ করবে, সেখানে যদি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়, তবে এই আইন বলে টিআইবির কর্মকর্তাদের অন্তত সাত বছর করে জেল হবে। এআইন থাকা মানে দেশকে অসভ্য বা মধ্যযুগে ঠেলে দেয়া। টিআইবির নির্বাহী পরিচালকে ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে জনগণকে ত্রাসের রাজত্বে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিরোধী দলের আপত্তি নেই। সম্ভবত তারা বিষয়টি উপভোগ করছে। ক্ষমতায় গিয়ে তারা আইনটির অপপ্রয়োগ করবে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পরিচালক সারা হোসেন বলেন, আইনের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট হতে হবে। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, সে যা লিখছে তা বেআইনি কি না। কিন্তু বর্তমানে আইনটি অস্পষ্ট। সরকার ইচ্ছামতো  এর অপপ্রয়োগ করতে পারবে। তাই এখন ইন্টারনেটে কিছু লেখার আগেই ভাবতে হবে। এ লেখার কারণে সাত বছরের, নাকি ১৪ বছরের জেল হবে। আইআইডির নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমদ বলেন, এই আইনের মাধ্যমে লঘুপাপে গুরুদন্ডের বিধান চালু করা হয়েছে। আইনটি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগীয় সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আইন অস্পষ্ট। এ অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে এর অপপ্রয়োগ হবে।
অশ্লীলতা মানবজীবনের জন্য এমন ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক ভাইরাসের ন্যায়; যা প্রতিটি মানুষেকে ক্রমান্বয়ে তার দৈহিক, মানসিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক, ধর্মীয়, রাষ্ট্রেয়, সাংস্কৃতিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আঘাতে করে তাকে দুর্বল করে দেয়। আর তার সুন্দর ও সাবলীল এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে থাকে। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, যে সকল বিষয় মানুষের প্রতিটি স্তরে ক্ষতি করে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় আধুনিক প্রজন্মের সেদিকেই চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে। আর তা হবে না কেন? নতুন প্রজন্মের ধ্বংস করে দিল আধুনিক গণমাধ্যমসমূহ।নিম্নে এ অশ্লিতা প্রচার ও প্রসারের আধুনিক গণমাধ্যমসমূহ বৈরী পদক্ষেপ সম্পর্কে চিত্র তুলে ধরা হলো:
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সুপারস্টার ও সুন্দরী প্রতিযোগিতা: বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সুপারস্টার ও সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আর তাতে অংশ নেয় বিভিন্ন সুন্দরীগণ। আর সেখানে সুপারস্টার ও সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে প্রদশিত হয় তাদের উলঙ্গ দেহের বিভিন্ন অংগের ব্যবহার। যা সেখানে উপস্থিত ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত চ্যানেলগুলো দর্শকের নৈতিক জীবনকে যৌন সুড়সুড়ির দিকে ধাবিত করে। তন্মধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সুন্দরী মিস, মিস ওয়াল্ড ও বিভিন্ন পুরুস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য। তবে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, আমাদের বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্বেও সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির এ কালো ছোবলে আক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। যা মুসলিম জাতির জন্য একটি অশুভ লক্ষণ। ইউটিউবে আপলোড করা বিভিন্ন নগ্ন ভিডিও : অশ্লীলতা প্রচার ও প্রসারের আধুনিক প্রযুক্তি সবচেয়ে এগিয়ে যাচ্চে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড ও ডাউনলোড করার উল্লেখযোগ্য একটি ওয়েব সাইট হলো ইউটিউব। যেখানে একজন ব্যক্তি যেকোন ভিডিও আপলোড করতে পারে। এ বিষয়টিকে আমরা সকলেই ইচ্ছে করলে ভালো ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু তা না করে বরং সেখানে এমন এমন ভিডিও আপলোড করা হয় যা ইতঃপূর্বের সকল নগ্নতাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে বিশেজ্ঞগণ মনে করেন। কেননা সেখানে সকল প্রকার নগ্ন ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেমন : কোন ছেলে মেয়েদের অন্তরঙ্গ ভিডিও, গোপনে ধারণকৃত অশ্লীল দৃৃশ্য ইত্যাদি। ফেসবুক : আধুনিক যোগাযোগের ও গণমাধ্যমের একটি বহুল চর্চিত মাধ্যম হলো ফেসবুক। যার মাধম্যে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও বার্তা আদান প্রদান করা হয়। কিন্তু আধুনিক যুগে এ গণমাধ্যমে এমন কিছু অশ্লীল ছবি দিয়ে আইডি খোলা এবং সেখানে এমন কিছু ছবি ও মন্তব্য পোষ্ট করা হয় যা ইসলামী শরীয়ত ও নৈতিকতা বিরোধী। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না হলে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ও আগত প্রজন্ম নৈতিকতা থেকে দূরে চলে যাবে এবং জাতি মেধাবুদ্ধি থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবে। বিভিন্ন ব্লগ : যোগাযোগের মাধ্যমের একটি বৃহৎ মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এ ইন্টানেটের মাধ্যমে বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন নামে ব্লগ তৈরি করেন। আর সেখানে তারা নিজস্ব মতামত ও লেখা পোস্ট করে থাকেন। কিন্তু আধুনিক কালে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন নামে ব্লগ পরিচালিত করে থাকেন, সেখানে ইসলাম বিরোধী ও যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নাস্তিক্যবাদী, জাঙ্গিবাদী এবং উস্কানিমূলক লেখা পোস্ট করে থাকেন। আর এ কারণে আজ আমাদের যুবসমাজের মধ্যে কোন প্রকার নৈতিকবোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর এ গুলো পড়ে ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্তধারণা নিতে শুরু করেছে। আর তারই প্রভাব পড়ছে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর। বিভিন্ন পত্রিকা . বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৈনিক, পাক্ষিক. দ্বি-পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকায় অশ্লীল ও নগ্ন ছবি পরিলক্ষিত হয়। এ সকল পত্রিকার মধ্যে আবার এমন পত্রিকা রয়েছে যেগুলোতে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য ও ছবি প্রকাশ করা হয়। অত্যন্ত পরিতাপ ও দুঃখের সাথে বলতে হয় যে আমাদের দেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত হওয়া সত্বেও আমাদের বাংলাদেশে বিজাতীয়দের অনুসরণ করে একই বক্তব্য প্রচার করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকার এমনকিছু নির্দিষ্ট পাতা রয়েছে যেখানে অর্ধনগ্ন ও নগ্ন ছবি প্রকাশিত হয়। এসকল পত্রিকার পাতা গুলোতে অশ্লীল ছবি প্রকাশিত হওয়ার কারণে সর্বস্তরের জনগণের দিকে ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আর এ জন্য সমাজেও অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আর কিছু পত্রিকা বাজারে পাওয়া যায় যা গোপনে বিক্রি করা হয় এবং তার মূল বিষয় হলো নগ্নতা ও যৌনতাকে উস্কিয়ে দেয়া।  নগ্ন বিলবোর্ড ও পোস্টার : অশ্লীলতার অপর একটি প্রচার মাধ্যম হলো নগ্ন বিলবোর্ড ও অশ্লীল পোস্টার। এ দৃশ্যটি বাংলাদেশে অনেক বছর আগে থেকেই প্রচলিত। যদিও পূর্বে থেকেই এটি প্রচলিত কিন্তু বর্তমানে যে অশ্লীল পোস্টার দেখা যায় তা হয়তো পূর্বের সকল কার্যক্রমকে ও হার মানিয়ে দেবে। কেননা অধুনা সিনেমার পেস্টার গুলোতে এমন কিছু নারীর ছবি প্রকাশ করা হয় যার দিক থেকে কোন নারীও হয়তো দৃষ্টিপাত করেতে পারে না। লজ্জায় তার মাথা নত হয়ে যায়। আর এ গুলো যখন যুব সমাজের মাঝে প্রকাশিত হয় তখন তারা এ সকল পোস্টার দেখে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
নারীদের বেপর্দাভাবে চলাচল : এবিষয়ে লিখলেই একটি গ্রন্থই লেখ যায়। যেহেত্ ুএটি একটি প্রবন্ধ, তাই এখানে মৌলিক কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো। নারী জাতির জন্য পর্দা মহান আল্ল্াহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে একটি আবাশ্যিক বিধান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আর মুমিন নারীদেরকে বল যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশ ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী পিতা শ্বশুর নিজেদের ছেলে. স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ. তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, ওদের কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন গোপন সৌর্ন্দয প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিন গণ তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তওবা কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। “আল-কুরআন, ২৪ :৩১”।
অন্যত্র এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন: “হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে, ও মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল,পরম দয়াল্”ু  আল-কুরআন, ৩৩ : ৫৯”। ইসলাম নারীদেরকে ঘরে বসে থাকতে বলেনি। তবে যখন সে বের হবে তখন তাকে কিছু নির্দেশনা মেনে তারপর বের হওয়ার নির্দেশ ইসলাম তাকে দিয়েছে। যেমন কারু কার্য ও নকশা বিহীন হিজাব ব্যবহার করা, “ তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত- তারা স্বীয় রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। এ আয়াতের ভিতরে কারুকার্য খচিত পর্দাও অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তা‘আলা যে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছে, সে সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রƒপ সে সকল নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথায় আলাদাভাবে বা শরীরের কোন জায়গায় যুক্ত করে রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহিলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।”  আল-কুরআন, ৩৩ :৩৩। অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা,যা পুরুষের যৌন উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এরূপ অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না। ( অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস হবে) যথা: ক.যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ পরিচালনাকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল। খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল। গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।” -হাকিম , আল-মুস্তদরাক আলাস-সহীহইন, প্রাগুক্ত, হাদীস নং-৩০৫৮”।
পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রচুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার করে নারীদের বাইরে বের হওয়অ হারাম। সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদীস উল্লেখ করছি, তিনি বলেন: “যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণ মোহিত বরার জন্য সে নারী ব্যভিচারিণী।”-ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, হাধীস নং-২৭০১”। শরীরে অঙ্গ প্রতঙ্গ ভেসে উঠে এমন পাতলা ও সংকীর্ণ হিজাব না হওয়া , পর্দা শরীরে রং প্রকাশ করে দেয় এমন পাতলা না হওয়া, নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় হওয়া, “সুখ্যাতির জন্য হিজাব পরিধান না করা বা মানুষ যার প্রতি আঙ্গুল নির্দেশ করে, পর্দা এমন কাপড়ের না হওয়া।সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে কাপড় পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট ও দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-ভোগ ও চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী ব্যক্তিরাই পরিধান করে। এ হুকুম নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ ধরনের কাপড় অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে, কঠোর হুমকির সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না করে মারা যায়”। পর্দা বিজাতিদের সদৃশ্য না হওয়া ইত্যাদি। “ এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,- ইব্ন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন সম্প্রাদায়ের সাথে মিল রাখল, সে ঐ  সম্প্রদায়ের লোক হিসাবে গণ্য।” ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, প্রাগুক্ত, খ. ১১,পৃ.২৬০, হাধীস নং-৫২৩২”।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন: “যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লহার স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল।” আল-কুরআন, ৫৭:১৬। ইবনে কাছীর অত্র আয়াতের তাফসীরে  বলেন : “এর জন্য আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের সাদৃশ্য পরিহার করতে বলেছেন। ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কাফেরদের  অনুসরণ করা যাবে না।”-ইব্ন কাছীর, তাফষীরুল কুর’আনিল ‘আজীম, প্রাগুক্ত, খ.৪, পৃ.৪৮৪”। জাবির বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) এর সাথে একবার ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করলাম। আজান-একামত ব্যতীত তিনি খুতবার পূর্বেই সালাত আরম্ভ করলেন। সালাত শেষে বেলাল (রা.) এর কাঁধে ভর দিয়ে দন্ডয়মান হলেন। সকলকে আল্লাহর তাকওয়ার আদেশ দিলেন, তার আনুগত্যের উৎসাহ প্রদান করলেন। মানুষের ওয়াজ-নসিহত করলেন। অতঃপর নারীদের নিকট গমন করে তাদের উদ্দেশ্যে নসিহত করে বললেন: তোমরা সদকা কর, তোমাদের অধিকাংশই হবে জাহান্নামের ইন্ধন। বিবর্ণ-ফ্যাকাশে মুখমন্ডল নিয়ে নারীদের মধ্যে হতে একজন দাঁড়িয়ে বলল: কেন, হে আল্লাহর রাসূল? রাসূল বললেন, কারণ তোমরা অধিক অভিযোগ কর, স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। জাবির বলেন: অতঃপর তারা তাদের অলংকারাদি সদকা করতে আরম্ভ করল। তাদের কানের দুল ও আংটি বেলালের বিছানো কাপড়ে ছুঁড়ে ফেলতে লাগল। -ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, পরিচ্ছেদ : সালাতুল‘ঈদাইন, প্রাগুক্ত, খ.৫, পৃ.৪৫৩, হাদীস নং-২০৮৫”। কিন্তু আধুনিক নারীরা এ সকল নির্দেশনার কোনোটাই মানছেন না। আর যে কারণে আজ তারা ধর্ষিত নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছেন। আর সে কারণে দায়ী করা হয় পুরুষদেরকে। ট. মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে : আধুনিক যুগে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে মোবাইল অন্যতম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তথ্য ব্যবহৃত হচ্ছে অনৈতিক কর্মকান্ডে। যেমন ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্লুু-টুথের মাধ্যমে পরস্পর ফাইল আদান-প্রদান করা, বিভিন্ন অশ্লিল ভিডিও মেমোরি কার্ডে ধারণ করে তা দেখা। আর এর মাধ্যমে আমাদের সমাজ বিশেষ করে যুব সমাজ একেবারে ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে।
উপসংহার : উপযুক্ত বিষয়গুলোর কারণে আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে বড় ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে আর যে কারণে আজ জাতি ধ্বংস হতে বসেছে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই জাতীয় সম্প্রচার নীতি প্রণয়ন করেছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে, সামাজিক শৃঙ্খলা ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে সম্প্রচার মাধ্যমের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, বিনোদনের জন্য সুস্থ ধারার নাটক, চলচ্চিত্র, গান ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। শিশু বা নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্যমূলক আচরণ বা হয়রানিমূলক কর্মকান্ডকে উদ্বুদ্ধ করে এমন অনুষ্ঠান প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে, শিশুদের নমস্তাত্ত্বিক, মানবিক এবং নৈতিক গঠনকে নেতিবাচকেভাবে প্রভাবিতে করে এমন ধরনের অশ্লীল, তথ্যগতভাবে ভুল  ভাষাগতভাবে অশোভন এবং সহিংসতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এ সকল নীতিমালা থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী। তবে এখানে একটি কথা মনে রাখা জরুরি তাহলো : জাতীয় নীতিমালা  অনুসরণের পাশাপাশি অশ্লীলতা প্রচার ও প্রসার থেকে বিরত রাখার মধ্যেই রয়েছে প্রতিবিধান। চরিত্রের উত্তম গুণাবলী দিয়ে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে চলে এ সকল অশ্লীলতা প্রচার ও প্রসার প্রতিরোধ করা বর্তমান সময়ের গণদাবী, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর বাণী ও রাসূলুল্লাহ (স.) এর হাদীসের প্রতিধ্বনি মাত্র। কারণ, যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না তাদের জন্যই শান্তি ও নিরাপত্তা এবং তারাই সুপথগামী। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত, কুরআন, সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণকামী হওয়া এবং সে সম্পর্কে যথেষ্ট আমল করে নিজেদের আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলা। (সমাপ্ত)